আরেকটি বাংলাদেশি দলকে জার্মানি থেকে ফেরত
১৯ জানুয়ারি ২০২২তিনটি সূত্র ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর এই তথ্য নিশ্চিত করেছে৷ তাদের বহনকারী ফ্লাইটটি বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় অবতরণ করে৷ একটি সূত্র জানিয়েছে, ৩৩ জনের এই দলে জার্মানি ছাড়াও অস্ট্রিয়া থেকে ফেরত পাঠানো চার জন ও রোমানিয়া থেকে পাঠানো তিন জন ছিলেন৷
ঢাকার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবং অভিবাসীদের যথাযথভাবে ঢাকায় পৌঁছে দিতে প্রায় ১০০ জার্মান পুলিশ সদস্য ফ্লাইটটিতে ছিলেন৷
এদিকে আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া ৫০ থেকে ৬০ জন বাংলাদেশিকে সম্প্রতি ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করার কথা জানিয়েছেন বার্লিনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া৷ ইনফোমাইগ্রেন্টসকে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স প্রতিবেদন পাওয়ার পরে আমরা তাদের ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছি৷ তাদের মধ্যে কতজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এই দলটিকে বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে শতাধিক জার্মান নিরাপত্তা কর্মকর্তারও ভিসা ইস্যু করেছিল দূতাবাস৷ তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রত্যেক যাত্রীর সঙ্গে দুইজন বা তিনজন নিরাপত্তাকর্মী উপস্থিত থাকেন৷
ফেরত পাঠানো হয়েছে আগেও
এর আগে আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের আরেকটি দলকে গত অক্টোবরে ফেরত পাঠিয়েছে বার্লিন৷ সেখানে মোট ৩২ জন ছিলেন বলে জানান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া৷
তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বসবাসের অনুমতি নেই এমন বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ও ইইউ এর মধ্যে ২০১৭ সালে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি)' স্বাক্ষরিত হয়৷ আমরা সেই চুক্তি অনুসরণ না করলে আমাদের উপর ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে ইইউ৷''
অক্টোবরে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে রাষ্ট্রদূত জানান, ২০১৭ সাল থেকে তখন পর্যন্ত ৮১৬ জনের জন্য ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট' ইস্যু করতে বাংলাদেশের প্রতি জার্মানি অনুরোধ জানিয়েছিল৷ তবে তিনি বলেন, ‘‘এদের মধ্যে অনেকে ইতোমধ্যে জার্মানি ছেড়ে চলে গেছেন৷ ফলে জার্মানি এখন আটশ'র বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে এটা বলা ঠিক নয়৷ বর্তমানের সংখ্যাটি অনেক কম৷''
অনিয়মিত অভিবাসী ফেরাতে ইউরোপের চাপ
ইউরোপীয় কমিশন সম্প্রতি বাংলাদেশ, ইরাক ও গাম্বিয়ার নাগরিকদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করেছে, যদি তারা ইউরোপে অবস্থানরত বৈধ বসবাসের অধিকার নেই এমন দেশগুলোর নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সহায়তা না করে৷
১৫ জুলাই ইউরোপীয় কাউন্সিলের কাছে পাঠানো এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ ছাড়াও ইরাক ও গাম্বিয়াকেও যুক্ত করা হয়েছে৷ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈধ কাগজবিহীন অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে দেশগুলোর সহাযোগিতা আরো জোরদার করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা৷
বাংলাদেশ সরকার এরকম নিষেধাজ্ঞা এড়াতে দূতাবাসগুলোর প্রতি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তার নির্দেশনা দিয়েছে৷ গত মাসে ঢাকার সহায়তায় ১৯ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে গ্রিস৷ ২০১৬ সালের পর গ্রিস থেকে প্রথমবারের মতো অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা এটি৷
এই বিষয়ে গ্রিসের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমকে জানান গ্রিক অভিবাসী ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি৷
প্রথম প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি, ২০২১ ইনফোমাইগ্রেন্টস
অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷