আসুন গর্ভপাতকে ‘না’ বলি
৭ মার্চ ২০১৭তিনি তখন সবে তরুণী৷ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক যুবককে বিয়ে করেছেন ভালোবেসে, পরিবারের অমতে৷ লেখাপড়ার পাশাপাশি দু'জনে খেটেখুটে সংসার চালাতেন তখন৷ এরইমাঝে হঠাৎ গর্ভবতী হয়ে পড়েন তরুণী৷ ওদিকে সংসার তখনো গোছানো যায়নি৷ ভবিষ্যত অনিশ্চিত৷ এমন সময় বাচ্চা নেয়াটা কি ঠিক?
সমাজের, শুভানুধ্যায়ীদের চাপ ছিল৷ নবদম্পতি ভেবেছেন অনেক, তবে শেষমেষ গর্ভপাতের পথে যাননি৷ বরং নিয়তিকে মেনে নিয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন৷ অথচ এমন কঠোর পরিস্থিতিতে হয়ত অনেকেই গর্ভপাত ঘটাতেন৷ আমি আমারই এক বিদেশি সহকর্মীর কথা জানি, যার জন্মের আগে তাঁর মা সাতবার গর্ভপাত ঘটিয়েছিলেন৷ সন্তান চাইতেন তিনি৷ কিন্তু নিজের আর সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য আমার সহকর্মীটি পৃথিবীতে আসতে সক্ষম হন৷ এখন একজন নামকরা সাংবাদিক তিনি৷ ঘুরে বেড়াচ্ছেন গোটা দুনিয়া৷
বলছি না গর্ভপাত কেউ মনের আনন্দে করান৷ কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েই গর্ভপাতের পথে পা বাড়ান অনেকে৷ তবে সেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার একমাত্র পন্থা যেন গর্ভপাত না হয় সেটাই আমার দাবি৷ আমার কাছে মনে হয় গর্ভপাত করানোটাও এক ধরনের হত্যাকাণ্ড৷ একজন বাবা বা মায়ের উচিত নয়, নিজের অনাগত সন্তানকে হত্যার দায় নেয়া৷ আইনিভাবে সেটা হয়ত বৈধ, নৈতিকভাবে নয়৷
জার্মানির ক্যাথলিক হাসপাতালগুলোতে গর্ভপাত করানো হয় না৷ শুধু তাই নয়, কেউ অনিরাপদ যৌনমিলনের পর জরুরি গর্ভনিরোধক পিল খেতে চাইলে তার ব্যবস্থাপত্রও ক্যাথলিক হাসপাতালগুলো থেকে দেয়া হয় না৷ একটি জীবন নষ্ট করার ব্যবস্থায় সায় নেই তাদের৷ আমার কাছে এই পদ্ধতি মন্দ মনে হয় না৷
আরো একটি ব্যবস্থা আছে জার্মানিতে৷ বিভিন্ন শহরে রয়েছে সদ্য জন্ম নেয়া সন্তান রেখে যাওয়ার বাক্স৷ কোনো মা বা দম্পতি যদি সন্তান জন্ম দেয়ার পর তাকে রাখতে না চান, তাহলে বিশেষভাবে তৈরি সেসব বাক্সে নিজেদের নাম পরিচয় গোপন করে সন্তান রেখে যেতে পারেন৷ বাক্সগুলো এমনভাবে তৈরি যে বাচ্চা রাখার পর সেটি নিজে থেকে বন্ধ হয়ে যায়৷ এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত চলে যায় নির্দিষ্ট জায়গায়৷ আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাচ্চাটিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ গন্তব্যে৷ তারপর তার বাকি দায়িত্ব রাষ্ট্রের৷
এতসব ব্যবস্থা করা হচ্ছে শুধুমাত্র একটা জীবন বাঁচাতে৷ যে জীবন আমরা দিতে পারি না, সেটা কেড়ে নেয়ার অধিকারও আমাদের থাকা উচিত নয়৷ তাই যারা এক্ষুণি সন্তান চান না তাদের নিরাপদ যৌনজীবন বেছে নিতে বলবো আমি৷ এ জন্য প্রয়োজনে আরো জনসচেতনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে৷ অধিকতর নিরাপদ গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা সহজলভ্য করা যেতে পারে যাতে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ রোধ করা যায়৷
এতটুকু পড়েই ভেবে নেবেন না সব ধরনের গর্ভপাতের বিরুদ্ধে আমি৷ দু'টো ক্ষেত্রে গর্ভপাত করা যেতে পারে:
প্রথমত, কোনো ধর্ষিতা অন্তঃসত্ত্বা হলে সেই বাচ্চা তিনি না চাইলে গর্ভপাত করাতে পারেন৷ এটা নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই৷
দ্বিতীয়ত, গর্ভবতী নারীর জীবন বাঁচাতে জরুরি হলে গর্ভপাত করা যেতে পারে৷
ও হ্যাঁ, শুরুতে যার জন্মের কথা বললাম তাঁকে চিনতে পারছেন? সেদিন গর্ভধারিণী গর্ভপাত করাননি বলে আজ এত কথা লিখতে পারছেন তিনি, পারছেন দুনিয়াটা উপভোগ করতে৷ প্রত্যেক সন্তানকেই এই সুযোগটা দেয়া উচিত৷
আপনার কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷