আসামিদের না পেয়ে একজনকেই চার্জশিট!
২৫ ডিসেম্বর ২০১৬গত সপ্তাহে একজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়ার যুক্তি হিসেবে মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআই-এর ইন্সপেক্টর আব্দুর রাজ্জাক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেউ তথ্য না দিলে কী করা যাবে? এত বড় আলোচিত ঘটনা চার্জশিট তো একটা দিতেই হবে৷ তাই একজনকে আসামি করেই চার্জশিট দিয়ে দিয়েছি৷''
চার্জশিটে যাকে আসামি করা হয়েছে তার নাম কামাল৷ সে পুরনো ঢাকার একজন ফল বিক্রেতা৷ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা সে স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে৷ তবে তার দাবি, সে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত নয়৷ তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘বাকি যাদের সিসিটিভি ফুটেজ ধরে চিহ্নত করা হয়েছে, তাদের কামাল চেনে না৷ তবে আমাদের মনে হয়েছে যে কামাল সুযোগ নিয়েছে৷''
২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখে (১৪ এপ্রিল) টিএসসির উল্টো দিকে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের গেটে এই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে৷ ঐ এলকায় সিসিটিভি ছিল, ছিল টহল পুলিশ৷ এরপরও প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ঐ ঘটনা ঘটার সময় নারীদের উদ্ধারে এগিয়ে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সে সময়কার ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীসহ আরো কিছু তরুণ৷ লিটন নন্দী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বেশ কয়েকজন নারী যৌন হয়রানির শিকার হন৷ তাঁদের মধ্যে আমরা ১০ জনকে উদ্ধার করেছি৷ আমার মনে হয়, এটা এক বা দু'জনের কাজ নয়৷ বড় একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপের কাজ ছিল এটা৷''
লিটন জানান, ‘‘পুলিশ প্রথমে ঘটনাটা অস্বীকার করেছিল৷ পরে অবশ্য ঘটনা স্বীকার করে পুলিশ নিজেই মামলা করে তদন্ত শুরু করে৷ আমরা সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে আটজনকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করি৷ কিন্তু এই আটজনই নয়, এর বাইরেও আরো অনেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল৷''
আটজনকে চিহ্নিত করার পর, গত বছরের ১৭ই মে তাদের ধরিয়ে দিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগবা ডিবি সংবাদমাধ্যমে তাদের ছবি প্রকাশ করে৷ এরপর একই বছরের ১৩ই ডিসেম্বর আদালতে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয় ডিবি৷ তারা জানায় যে, তারা কাউকে এই ঘটনায় জড়িত বলে চিহ্নিত করতে পারেনি৷ কিন্তু চলতি বছরের ২৮শে জানুয়ারি পুলিশ ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে কামাল নামে একজন ফল বিক্রেতাকে আটক করে৷ পুলিশ জানায় চিহ্নিত আটজনের মধ্যে একজন কামাল৷ ঘটনার সময় তার দাড়ি থাকলেও, পরে সে দাড়ি কেটে ফেলে৷
এরপর ডিবি মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন জানালে আদালত মামলাটি ২৩শে ফেব্রুয়ারি পুনরুজ্জীবনের আদেশ দিয়ে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয় পিবিআই-কে৷
কিন্তু পিবিআই মামলার নতুন কোনো তদন্ত না করে ঐ একজনকেই আসামি করে চার্জশিট দিয়েছে৷ মামলায় ৩৪ জন সাক্ষীর কথা বলা হলেও, ঘটনার শিকার কারুর জবানবন্দি বা বক্তব্য নেই৷ পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এ ধরনের ঘটনার শিকার যাঁরা হন, তাঁরা সাধারণত নিজেদের নানা কারণে প্রকাশ করতে চান না৷ তাই তাঁদের বক্তব্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে৷ তবে পুলিশের কাজ হলো তাঁদের নাম পরিচয় গোপন রেখে তাঁদের বক্তব্য জানা৷ তা না হলে তদন্ত পূর্ণাঙ্গ হয় না৷ কারণ শুধু ছবি বা ফুটেজের মাধ্যমে সব সময় নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, কে দুর্বৃত্ত আর কে উদ্ধার বা রক্ষাকারী৷''
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেউ আমাদের সহযোগিতা করেনি৷ কেউ আমাদের তথ্য দেয়নি৷ আমরা কী করবো?'' কিন্তু তাই বলে এমন একটা দুর্বল তদন্ত, দুর্বল চার্জশিট? এ প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ‘‘তা হবে কেন! কখনো চিহ্নিতদের ধরতে পারলে, তাদের নাম ঠিকানা জানতে পারলে আমরা আদালতকে জানাবো৷ তখন তারাও আইনের আওয়তায় আসবে৷''
লিটন নন্দী বলেন, ‘‘এটা দুঃখজনক যে চিহ্নিত করার পরও অভিযুক্তদের খুঁজে পায়নি পুলিশ৷ দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এতগুলো এজেন্সি, তাদের এত ‘সোর্স', তারপরও তারা অপরাধীদের ঠিকানা বের করতে পারে না৷ এটা তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক আস্থাহীনতা তৈরি করবে৷''
বাকি সাতজন অভিযুক্তকে খুঁজে না পেয়ে একজনকে চার্জশিট দেওয়া কি যুক্তিসঙ্গত? জানান আপনাদের মতামত, লিখুন নীচের ঘরে৷