আল্পসের কোলে স্বপ্নময় শহর শামোনি
১২ এপ্রিল ২০১৮আল্পস পর্বতমালার সবচেয়েবড় পর্বতশিখর মঁ ব্লঁ৷ তারই কোলে শীতকালীন ক্রীড়ার জন্য বিখ্যাত শামোনি শহর৷ ব্যার্নাডেট সুডা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে বসবাস করছেন৷ তিনি পর্যটকদের শহরের মূল আকর্ষণগুলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পুরো উপত্যকায় পাহাড়ের ছায়া৷ এখান থেকে মঁ ব্লঁ পর্বতের দৃশ্যও অসাধারণ৷ সেটাই মূল আকর্ষণ৷''
এই এলাকা সবার আগে ক্রিস্টাল শিকারিদের কারণে পরিচিত হয়েছিল৷ পাহাড়ে দামি কোয়ার্টস পাথরের সন্ধানে তাদের আবির্ভাব ঘটে৷ সেই পাথর জেনিভা হয়ে ভার্সাই প্রাসাদ পর্যন্ত পাঠানো হতো৷ শামোনি শহরের ক্রিস্টাল মিউজিয়ামে মঁ ব্লঁ পর্বতের ধাতুর জগতের নানা চমক দেখা যায়৷ ব্যার্নাডেট বলেন, ‘‘ভেবে দেখুন, শামোনি ছিল ছোট্ট এক সাধারণ গ্রাম৷ সেখানকার মানুষ সহজ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিলেন৷ অনেকেই বেশ গরিব৷ পাহাড়ের পাদদেশ থেকেই ক্রিস্টাল বার করে জেনিভায় বিক্রি করে দু পয়সা কামানোর উপায় পেয়ে অনেকেই খুশি৷ এভাবে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে৷''
এমন উদ্যোগ শামোনি-কে বিশ্ববিখ্যাত করে তুলেছে৷ বহুকাল ধরে পর্যটকদের ঢল নেমেছে৷ তারা অন্তত কেবেল কারে চেপে ৩,৮০০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছাতে চান৷ আধুনিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা সত্ত্বেও সেই যাত্রা বেশ রোমহর্ষক বটে৷
তবে একবার উপরে পৌঁছে গেলে মঁ ব্লঁ পর্বতের জাদু টের পাওয়া যায়৷ খুব সাহস থাকলে একটি কাচের ঘরে গিয়ে কার্যত ‘শূন্যে ভেসে' নীচে তাকানো যেতে পারে৷ রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়৷ এই উচ্চতায় অনেকে স্কি করে থাকেন৷ তবে সেটা সত্যি একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ ব্রিটেনের এক পর্যটক বললেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর ধরে স্কি করার সময় আমি সব দিক থেকে তাকিয়ে দেখেছি৷ তবে এই প্রথম পাহাড়ের উপরে এলাম৷ শামোনি শহরেও প্রথম পা রাখলাম৷ আমার স্বামী ১৯৬০, ৬২ ও ৬৬ সালে হেঁটে এই পাহাড়ে উঠেছে৷ তার জন্যই আমি এখানে এসেছি, যাতে ইংল্যান্ডে ফিরে ছবি দেখাতে পারি৷''
মঁ ব্লঁ পর্বতশিখরের চারিদিকে পর্যটন ক্ষেত্রের বিকাশ ঘটতে এবং শীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হিসেবে শামোনি শহরকে প্রতিষ্ঠা পেতে প্রায় আড়াইশো বছর লেগে গেছে৷ তবে মজার বিষয় হলো, প্রথম পর্যটকরা কিন্তু মোটেই মঁ ব্লঁ দেখতে আসেন নি৷ তাদের গন্তব্য ছিল ‘ম্যার দ্য গ্লাস' – যা ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় হিমবাহ৷ ট্রেনে চেপে সেখানে সহজে পৌঁছানো যায়৷ তথাকথিত এই বরফের সমুদ্র প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ৷ মঁ ব্লঁ পর্বতশ্রেণির উত্তর দিকে সেটি অবস্থিত৷
শামোনি শহরে বিখ্যাত পর্বতশিখরকে উপলক্ষ্য করে দারুণ এক মিষ্টি পাওয়া যায়৷ শহরের বিখ্যাত এক কেকের দোকানে মঁ ব্লঁ-র আদলে তৈরি সেই মিষ্টির বিশাল চাহিদা রয়েছে৷ প্রচুর ক্রিম ও মচমচে বিস্কিট দিয়ে তৈরি৷ ৩০ বছর ধরে জাকলিন ফাটিয়ে সেই ক্যাফের মালিক৷ তাঁর বেশ কিছু কেক পুরস্কারও পেয়েছে৷
বাইরে শীতের সূর্য ডুবতে চলেছে৷ শেষবারের মতো সোনালী রোদের চাদর আল্পস পর্বতের শিখর ঢেকে দিয়েছে৷
মেগিন লেই/এসবি