1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাহাড় যখন সাগর ছিল (২)

৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আফ্রিকা আর ইউরোপ মহাদেশের ধাক্কায় আল্পস পর্বতমালা জন্ম নেয়, উঠে আসে কিংবদন্তির টেথিস সাগর থেকে৷ তাই আল্পসের পাহাড়চূড়োয় আজও প্রবাল বা শামুক কিংবা ঝিনুক খুঁজে পাওয়া যায়৷ কিন্তু তারা এলো কোথা থেকে?

https://p.dw.com/p/2s9uu
	
Afrika Homo sapiens
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Weber/University of Vienna

ব্রাউনেক পাহাড়ের উপর পৃথিবীর ইতিহাসের এক নাটকীয় অধ্যায় তার ছাপ রেখে গেছে৷ ট্রিয়াস বা ট্রিয়াসিক থেকে জুরা বা জুরাসিক পিরিয়ডে যাবার সময় সম্ভবত একাধিক অতিকায় আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত হবার ফলে প্রায় সমস্ত জীব ও প্রাণীরা বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ অতীতের টেথিস সাগরের অগভীর এলাকায় সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবনধারণের পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে৷

মিউনিখের লুডভিশ মাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ অধ্যাপক আলেক্সান্ডার ন্যুটসেল বললেন, ‘‘আমরা এখানে একটা খাড়াই দেখছি, যা লিয়াস, অর্থাৎ জুরাসিক পিরিয়ডের গোড়ার দিকে সৃষ্টি হয়৷ তখন সব প্রবালের সঙ্গে শৈলশিরার বাসিন্দারাও উধাও হয়৷ সেই সঙ্গে অ্যামোনাইট আর কয়েক ধরনের ঝিনুকও অন্তর্হিত হয়৷ অর্থাৎ একটা সুবিশাল পরিবেশগত বিপর্যয়, যার চিহ্ন এখানে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে৷''

প্রাগৈতিহাসিক টেথিস সাগরের প্রাণীদের কয়েকটি প্রজাতি খুব সম্ভবত সাগরের গভীরে বাস করত বলে বেঁচে যায়৷ স্টকহোমের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের স্টেফেন কিল ঠিক সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন ব্যার্খটেশগাডেনের আল্পস বা তথাকথিত ‘প্রস্তরীভূত সাগরে'৷ এখানে এমন সব স্তর পাওয়া যায়, যেখানে এককালে ব্রাকিওপড-রা বিপুল সংখ্যায় বাস করত৷ ব্রাকিওপডরা হলো ঝিনুকের মতো একটি জীব৷ কিল জানালেন, ‘‘ঝিনুকগুলো একটু খুললে, তাদের ভেতর থেকে সব শুঁড় বেরিয়ে আসে৷ এই শুঁড়গুলোর উপরে আবার চোখের পাতার মতো রোঁয়া লাগানো আছে৷ সেই রোঁয়ার ভিতর দিয়ে সাগরের জল ফিল্টার হয়ে মুখে ঢোকে ও ব্রাকিওপডরা তাদের খাদ্য সংগ্রহ করে৷''

জুরাসিক আমলের জীব

তথাকথিত ‘চুনাপাথরের আল্পসে' এ ধরনের কয়েকটি স্থান আছে৷ জুরাসিক পিরিয়ডে এ ধরনের জীবগুলি যে এত ব্যাপক ছিল, তার নিশ্চয় কোনো একটা কারণ আছে? টেথিস সাগরের গভীরে তাদের খাদ্যের নিশ্চয় কোনো একটা বিশেষ উৎস ছিল? সেই উৎস মিথেন গ্যাস ছিল বলে ধারণা স্টেফেন কিলের৷

‘‘যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন রাজ্যে আমরা সাগরের নীচের পলির স্তরে ঠিক এই ব্রাকিওপডগুলো খুঁজে পেয়েছি৷ আমরা দেখাতে পেরেছি যে, ওখানে আগে একটা মিথেন গ্যাসের উৎস ছিল৷ অর্থাৎ মাটি থেকে মিথেন গ্যাস বেরোয় বলে সেখানে জীবাণুরা ভিড় করে৷ আর ব্রাকিওপডরা ঐ জীবাণুদের খায়, কাজেই তাদেরও সংখ্যা বাড়ে৷ এখানে আল্পস পর্বতমালাতে, মানে অতীতের টেথিস সাগরে ঠিক তাই ঘটেছিল বলে আমাদের ধারণা,'' জানালেন তিনি৷

অতীত কি বর্তমানে, গভীর সমুদ্রে মিথেন গ্যাসের উৎস একটা মরুদ্যানের মতো, কেননা, সেখানে যেসব প্রাণী বাস করে, তারা একটা চরম পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে৷ টেথিস সাগরের অগভীর এলাকাগুলিতে যে বিপর্যয় ঘটছিল, ঝিনুকের আকারের ব্রাকিওপডরা তা থেকে রক্ষা পায় শুধু তারা গভীর জলে বাস করতো বলে৷

কিন্তু স্টেফেন কিল-কে প্রথমে প্রমাণ করতে হবে যে, আল্পস পর্বতমালার ‘প্রস্তরীভূত সাগরেও' ব্রাকিওপডরা মিথেন গ্যাসের কারণেই বেঁচে থাকতে পেরেছিল৷ সেজন্য তিনি তাঁর সংগৃহীত ব্রাকিওপডের নমুনাগুলিকে ল্যাবরেটরিতে পাঠাচ্ছেন পরীক্ষার জন্য – যে পরীক্ষা থেকে এই ঝিনুকগুলির মেটাবলিজম বা খাদ্য থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করার প্রণালীও ধরা পড়বে৷ মাস দুয়েকের মধ্যেই ফলাফল আসার কথা৷

সম্ভবত আল্পস অঞ্চলে অতীতের আরো অনেক অজ্ঞাত পরিবেশ প্রণালীর খোঁজ পাওয়া যেতে পারে, যা থেকে ইউরোপের সবচেয়ে সুপরিচিত পর্বতমালার জন্মের মুহূর্ত সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানা যাবে৷

হ্যারব্যার্ট  হাকল/এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য