আরব বিশ্বে বর্ণবাদ নিয়ে আলোচনা
৭ জুলাই ২০২০টিউনিসিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের সংগঠন ভয়েসেস অব ব্ল্যাক টিউনিসিয়ান উইমেন এর সহপ্রতিষ্ঠাতা খোয়ালা খিখি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা হচ্ছে ফর্সা চামড়া৷ ''
তিনি বলেন, ‘‘সমাজের চাপে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের কোঁকড়া চুল সোজা করতে বাধ্য করা হয়, চামড়া ফর্সা করার পণ্য ব্যবহার করতেও বাধ্য হতে হয়৷''
সাউথ সুদানের সাংবাদিক সুজান কিস ওটোর আল জাজিরাকে বলেন, চামড়া ফর্সা না হলে একজন মেয়ের বিয়েতেও জটিলতা সৃষ্টি হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো মেয়ে ফর্সা হওয়ার ক্রিম ব্যবহার বন্ধ করলে নিজের বন্ধুরাই সমালোচনা শুরু করে৷''
পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার পর অ্যামেরিকাজুড়ে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধে৷ এরপর থেকে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আরব বিশ্বেও আলোচনা শুরু হয়েছে৷ কেবল আরব দেশগুলো নয়, বিভিন্ন দেশের মুসলিম সমাজেও চলছে আলোচনা৷ জার্মানিতে মুসলিমদের সংগঠন আলহামব্রা গেজেলশাফটের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সাংবাদিক এরেন গুভারচিন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জার্মানির মুসলিম সম্প্রদায়ে নিজেদের সমাজের বর্ণবাদ নিয়ে আলোচনা চলছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বর্ণবাদ, ইহুদিবিদ্বেষ এবং অন্য নানা বিদ্বেষের কারণগুলো প্রায় সব সমাজে একই৷ অন্যদের হেয় করে মানুষ নিজেকে বড় মনে করতে চায়৷''
এ নিয়ে স্পষ্ট আলোচনা হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি৷ গুভারচিন বলেন, ‘‘কোনো কোনো মুসলিম মনে করেন ‘ইসলাম বর্ণবাদ বা ইহুদিবিদ্বেষ সমর্থন করে না' বললেই সমস্যাটা মিটে যাবে৷'' এ ধরনের মানুষ এ নিয়ে কোনো বিতর্ককে নিজেদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে বেঈমানি বলেও মনে করেন৷
দাসব্যবসার উত্তরাধিকার
আরব বিশ্বে কিছু এলাকায় অনেক আগে থেকেই কৃষ্ণাঙ্গদের ‘দাস' বলে উল্লেখ করা হতো৷ ফলে এ বিষয়টি অনেকটা স্টেরিওটাইপে পরিণত হয়েছে৷
কয়েকশ বছর ধরে বিভিন্ন আরব জাতি দাস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত৷ সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে মানুষ ধরে ইউরোপের দাস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা ছিল লাভজনক ব্য়বসা৷ দাসদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা ও জোরপূর্বক যুদ্ধে পাঠানো হতো৷ ‘ল্য'এসক্লেবে এন তেরে দিইসলাম' (ইসলামের দেশে দাসপ্রথা) বইয়ে আলজেরিয়ান নৃতত্ত্ববিদ মালেক শেবেল লিখেছেন, ‘‘প্রজন্মের পর প্রজন্ম, শতকের পর শতক ধরে দাসত্ব একটি মুসলিম প্রথায় পরিণত হয়েছে৷''
আরব বিশ্বে অনেকক্ষেত্রে এখনও চামড়ার রঙের ওপর মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে৷ যেমন মিশরে কালো চামড়ার নুবিয়ানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে মনে করা হয়৷
মিশরীয় ইতিহাসবিদ আমিনা এলবেনডারি অনলাইন ম্যাগাজিন ইজিপশিয়ান স্ট্রিটসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘তুর্কি-অটোমান অভিজাতরা প্রত্যেকেই ছিলেন ফর্সা চামড়ার৷ ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরাও ছিলেন সাদা চামড়ার৷ এর ফলে ফর্সা চামড়ার সঙ্গে আভিজাত্যের সম্পর্ক রয়েছে, এমন ধারণার সৃষ্টি হয়৷ পাশাপাশি, শ্রমিক শ্রেণীর সঙ্গে সম্পর্কিত করা হয় অপেক্ষাকৃত কালো চামড়ার মানুষদের৷''
ক্যার্স্টেন ক্নিপ/এডিকে