আবারো কুপিয়ে হত্যা বাংলাদেশে
২২ মার্চ ২০১৬পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাতটার দিকে মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী তাঁর বাসার পাশের রাস্তায় হাঁটছিলেন৷ এ সময় একটা মোটরসাইকেলে তিন দুর্বৃত্ত এসে তাঁকে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে হত্যা করে৷ আর হত্যার পর দুর্বৃত্তরা ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যায়৷
নিহত হোসেন আলী (৬৮) ১৭ বছর আগে স্বপরিবারে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন৷ কুঁড়িগ্রামের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘‘বিষয়টির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ আপাতত তদন্তের স্বার্থে এখনই পুরো বিষয়টি বলা যাচ্ছে না৷ তবে উগ্রবাদীদের হাতে আগের হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের ধরণ মিলে যায়৷''
হামলা-হত্যার মোটরসাইকেল স্টাইল
গত ছ'মাসে বিদেশি নাগরিক হত্যাসহ, ধর্মযাজক, পুরোহিত এবং পুলিশ হত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, প্রতিটি ঘটনাতেই দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে গিয়ে হামলা চালায়৷ আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেলের আরোহী ছিল কম-বেশি তিনজন৷ তাদের হামলার ধরণও এক৷ অর্থাৎ তারা কুপিয়ে বা জবাই করে হত্যা করে৷ মঙ্গলবার কুঁড়িগ্রামে হোসেন আলীকেও ঐ একইভাবে হত্যা করা হয়৷
এর আগে গত ২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলা কেটে হত্যা করা হয়৷ হামলাকারী ছিল তিনজন এবং তারাও এসেছিল মোটরসাইকেলে৷
গত ২৮শে সেপ্টেম্বর গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তরা গুলি করে ইটালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যা করে৷ এখানেও হত্যাকারীরা আসে মোটরসাইকেলে চড়ে৷
৩রা অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ডও ঘটানো হয় একই স্টাইলে৷ এখানে ঘাতকরা মোটরসাইকেলে এসে হত্যার পর আবার মোটরবাইক যোগেই পালিয়ে যায়৷
এর আগে ৫ই অক্টোবর ঈশ্বরদীতে ফেইথ বাইবেল চার্চের যাজক লুক সরকারকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বত্তরা৷ তিন যুবক মোটরসাইকেল যোগে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সড়কে ভাড়া বাসায় ঢুকে ধর্মগ্রন্থ পাঠ শোনার কথা বলে তাঁর ওপর হামলা চালায়৷
১৮ই নভম্বের র্দুবৃত্তরা দিনাজপুরে খ্রিষ্টান ধর্মযাজক পিয়ারো পারোলারি পচিমোকে হত্যার চেষ্টা করে৷ তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী এ হামলা চালায় বলে জানা গেছে৷ হামলাকারীদের একজনের মাথায় হেলমেট ও অন্য দু'জনের মুখ চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল৷
তারও আগে ৪ঠা নভেম্বর আশুলিয়ায় পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের ওপর হামলা এবং হত্যার ঘটনাও ঘটিয়েছে তিন মোটরসাইকেল আরোহী৷ সে সময় এক পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল৷
পুলিশ ও গোয়েন্দারা যা মনে করেন
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘আমরা এ পর্যন্ত তদন্তে দেখেছি যে, এই হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র সদস্যরা জড়িত৷ সম্প্রতি তারা কয়েকজন ধর্মীয় পীর এবং আইনজীবীকে হত্যারও পরিকল্পনা করেছিল৷ ঐ আইনজীবী রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছিলেন৷ সোমবার রাতে এ ধরণের হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত চারজন জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়েছে৷'' এই আটক চারজন হলেন, আব্দুর রাজ্জাক উমায়ের, ফয়সাল আহম্মেদ, আহমেদ ফজলে আকবর ও আবু নাঈম মোহাম্মদ জাকারিয়া৷
বিশ্লেষকরা যা বলছেন...
এ নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক ও জঙ্গি বিষয়ক গবেষক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হামলার ধরণ এবং টার্গেট দেখে এটা নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায় যে যারাই এই কাজ করুক না কেন, তাদের উদ্দেশ্য এক৷ তারা একই ধরণের উগ্রবাদী গ্রুপের সদস্য৷ তারা বিদেশি, সংখ্যালঘু এবং ভিন্ন ধর্মীয় চিন্তার মানুষ ও স্থাপনাকে টার্গেট করছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই গোষ্ঠীটি ধর্মান্ধ এবং মৌলবাদী, তারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ তারা হয়ত আরও বড় ধরণের হামলার পরিকল্পনা করছে৷''
নূর খান বলেন, ‘‘এর সঙ্গে বিশ্বে যে জঙ্গিবাদের উত্থান দেখা যাচ্ছে, তার সম্পর্ক আছে৷ তাই সরকারের উচিত হবে অন্ধকারে সুঁই না খুঁজে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই অপতৎপরতা ও হামলাকে প্রতিহত করা৷''
আপনার কী মনে হয় বন্ধু? সরকার কি পারবে এহেন অপতৎপরতা ও হামলাকে প্রতিহত করতে? লিখুন নীচের ঘরে৷