আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা খালেদার
১৩ মার্চ ২০১৫
শুক্রবার বিকেলে খালেদা জিয়া তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে৷ সাহসিকতার মাধ্যমে সবাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলে আন্দোলন সফল হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সংকট সমাধানের চাবিকাঠি ক্ষমতাসীনদের হাতে৷ তাই সংকট নিরসনের মাধ্যমে তারা সেই কাঙ্খিত জাতীয় ঐক্যের পথ খুলে দিতে পারে৷ তাহলেই আমরা সংকটমুক্ত হয়ে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির ৪৫তম স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারবো৷ আমি আশা করি, ক্ষমতাসীনদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে৷ তারা সমঝোতার পথে ফিরে আসবে৷ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সংকট দ্রুত নিরসনের উদ্যাগ নেবে৷''
খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘দেশ আজ গভীর সংকটে৷ এই সংকট রাজনৈতিক৷ এর স্রষ্টা আওয়ামী লীগ, নির্দিষ্ট করে বললে শেখ হাসিনা৷ জনগণের সম্মতি ছাড়া রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন তিনি৷ আওয়ামী লীগ একতরফা সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ করে দেয়৷ সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সুযোগই তারা রাখেনি৷''
সংবাদ সম্মেলনে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়াসহ চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে কিছু দাবি তুলে ধরেন বেগম জিয়া৷ তিনি বলেন, ‘‘গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি, গুম-খুন-অপহরণ ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ, মামলা প্রত্যাহার, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি, সভা-সমাবেশের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আয়োজন করতে হবে৷''
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি৷ তাই আমরা আন্দোলনের পথই বেছে নিয়েছি৷'' তিনি নেতাক-র্মীদের নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘যাঁরা এখনো নিষ্ক্রিয় আছেন তাঁরা সক্রিয় হন৷''
দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘সালাহ উদ্দিন আহমেদকে মুক্তি দিন৷ অন্যথায় পরিণতি শুভ হবে না৷''
আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া
এদিকে খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের পর পরই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ৷ তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি ২০১৪ সালে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে এখন আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যায় নেমেছে৷''
তিনি ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের সময় বিএনপির বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ায় সময়ে ১৪২ জন সাধারণ মানুষকে কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করেছে তারা৷ সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল বিএনপি৷ এ অভিযোগে খালেদা জিয়াকে বিচারের মুখোমুখি করা যেতে পারে৷''
হানিফ অভিযোগ করেন, ‘‘জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলেই খালেদাও ভোটে আসেননি৷ কারণ বিএনপি-জামায়াত একে অপরের বন্ধু৷ বন্ধুকে ছাড়া খালেদা কীভাবে নির্বাচনে যাবেন?''
তিনি বলেন, ‘‘বন্ধুর মন রক্ষা করতে নির্বাচনে না গিয়ে এখন সহিংসতা চালিয়ে দেশের মানুষকে হত্যা করছে বিএনপি-জামায়াত৷ সরকার সহিংসতা আর জঙ্গিবাদের কাছে মাথা নত করবে না৷ যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হতে পারে না৷''
প্রসঙ্গত, ৩রা জানুয়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়ে আছেন খালেদা জিয়া৷ ৫ই জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের বছরপূর্তিতে নয়া পল্টনে প্রতিবাদ সমাবেশে যেতে না পেরে তিনি ৬ই জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন৷ এরপর যুক্ত হয় টানা হরতাল৷ টানা অবরোধ-হরতালের শুক্রবার ছিল ৬৭তম দিন৷
৬ই জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ-হরতাল শুরু হওয়ার পর এটি খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলন৷ তিনি সর্বশেষ ৫৩ দিন আগে ১৯শে জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে৷