আদালতে মামলার চাপ, মাঠে হরতাল-অবরোধের সহিংসতা
৫ মার্চ ২০১৫জানুয়ারির ৬ তারিখ থেকে শুরু হওয়া টানা অবরোধ আর হরতালে এ পর্যন্ত ১১৪ জন নিহত হয়েছে বাংলাদেশে৷ তাদের মধ্যে পেট্রোল বোমায় ঝলসে গেছে ৬১ জনের জীবন৷ গণপিটুনি আর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৩০ জন৷ প্রায় দেড় হাজার যানবাহন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অথবা ভাঙচুর করা হয়েছে৷ এছাড়া রেলে নাশকতা করা হয়েছে ১৫ বার৷
সপ্তাহ খানেক আগে সহিংসতা কিছুটা কমে আসলেও, তা স্থায়ী হয়নি৷ আর এখন আবারো তা বাড়ছে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জ, চাপাই নবাবগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে অন্তত ২০ জন বাসে ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়েছেন৷ কমপক্ষে ৪৩টি বাসে ভাঙচুর এবং আগুন দেয়া হয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার খালেদা জিয়াকে মামলার চাপে ফেলতে চাইছে৷
গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অর্ফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে৷ ঐ দিন খালেদা বা তাঁর কোনো আইনজীবী আদালতে যাননি৷ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ৪ঠা এপ্রিল বুধবার, মামলার পরবর্তী তারিখে খালেদার আইনজীবীরা আদালতে গেলেও খালেদা জিয়া যথারীতি অনুপস্থিত ছিলেন৷খালেদা জিয়া ঐ দু'টি মামলায় সর্বশেষ আদালতে যান গত বছরের ২৪শে ডিসেম্বর৷ এরপর এ নিয়ে মোট চারবার তিনি গড়হাজির আছেন৷ প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে মামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ৬৩টি তারিখের মধ্যে খালেদা আদালতে যান সর্বসাকুল্যে মাত্র সাতবার৷
খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যলয়ে তল্লাশি পরোয়ানাও জারি করেছে আরেকটি আদালত৷ গত রোববার গুলশান থানা পুলিশের আবেদনে এই তল্লাশি পরোয়ানা জারি করা হয়৷ আগে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গুলশান থানায় না গেলেও, এরমধ্যে তল্লাশি পরোয়ানা থানায় পৌঁছেছে৷ অবশ্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আরো একমাস, অর্থাত্ ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত বহাল রেখেছে আদালত৷
ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদাতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়ে খালেদার আইনজীবীরা দুর্নীতির মামলা দু'টির আদালত পরিবর্তনের আবেদন জানান ২৮শে জানুয়ারি৷ সেই আবেদনের শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার, হাইকোর্টে৷ বৃহস্পতিবার বুধবার আবেদনের শুনানি ১২ই মার্চ পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়৷ একই সঙ্গে খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিতের আবেদন জানানো হলে আদালত তার শুনানিও একই সময় পর্যন্ত মুলতুবি করে৷
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ তিনি আদালতে যেতে চান৷ কিন্তু যে আদালতের প্রতি তিনি অনাস্থা দিয়েছেন, সেই আদালতের মামলা দু'টি বিচারের নৈতিক অবস্থান নেই৷ তাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন না৷ তবুও খালেদা জিয়ার নিরপত্তা নিশ্চিত করা হলে তিনি আদালতে যেতেন৷''
তবে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক-এর আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া আদালতকে অবজ্ঞা করছেন৷ তিনি আদালতে হজির হচ্ছেন না৷ আদালতের আদেশ বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতি সম্মান দেখানো সবার আইনি দায়িত্ব৷ আর আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে তিনি বার বার গড়হাজি থাকার পর৷ তাঁকে আইনজীবীর মাধ্যমে বার বার আদালতে হাজির হতে নোটিস দেয়া হয়েছে৷ গত ২৯শে জানুয়ারি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাঁকে পরবর্তী তারিখে আদালতে হাজির করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু তাঁরা সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি৷''
ওদিকে সরকার মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে খালেদা জিয়াকে চাপে রাখতে চাইছে৷ তাঁকে গ্রেপ্তার করে নতুন কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না৷ সে কারণেই গুলশান থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পৌঁছাচ্ছে না৷
সারাদেশে হরতাল-অবরোধে নিহতের ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে এরই মধ্যে পাঁচটি মামলা হয়েছে৷ জানা গেছে, সেসব মামলার তদন্তও দ্রুত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে৷ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারী এ বি সিদ্দিকী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আগামী ১৬ এবং ১৮ই এপ্রিল গুলশান ও শাহবাগ থানার দু'টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷''
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতির মামলাও সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ তবে মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন খালেদা জিয়া৷ এর শুনানি শুরু না হওয়া পর্যন্ত খালেদা ঐ মামলায় জামিনে আছেন৷ দুদক মামলাটির শুনানির জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেছে ইতিমধ্যেই৷