আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো ম্যার্কেলের জমানা
২৭ অক্টোবর ২০২১জার্মান রাজনীতির জগতে মঙ্গলবার ছিল ব্যস্ততার দিন৷ রেকর্ড সংখ্যক সদস্য নিয়ে সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগের নতুন যাত্রা শুরু হলো৷ ৭৩৬ জন সংসদ সদস্য এ দিন দায়িত্ব গ্রহণ করলেন৷ ফেডারেল জার্মানির ইতিহাসে তৃতীয় নারী হিসেবে স্পিকারের পদে নির্বাচিত হলেন এসপিডি দলের বেয়ার্বেল বাস৷ বিদায়ী ও নতুন স্পিকার সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে সংসদ সদস্যদের সংখ্যা সীমিত রাখার পক্ষে সওয়াল করলেন, যাতে ২০তম সংসদের এমন অস্বাভাবিক রূপের পুনরাবৃত্তি না হয়৷ গতবারের তুলনায় ১৪০ জন বাড়তি সংসদ সদস্যের কারণে জার্মানির করদাতাদের উপর বছর দশ কোটি ইউরোর বোঝা চাপবে বলে করতাদাদের সংগঠন হিসেব করেছে৷
এই সব ব্যস্ততার মাঝে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের উপস্থিতি সহজে চোখে পড়ার মতো ছিল না৷ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চ্যান্সেলর এবং তিন দশকেরও বেশি সময় জুড়ে সংসদ সদস্য থাকার পর তিনি এবার নির্বাচনে দাঁড়াননি৷ তাই বুন্ডেসটাগে ভিআইপি দর্শকের আসনে বসেই তিনি সব আনুষ্ঠানিকতা পর্যবেক্ষণ করলেন৷
জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার মঙ্গলবারই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ী সরকারকে বিদায় জানালেন৷ ম্যার্কেলসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের অব্যহতি দিলেন তিনি৷ তিনি দেশের কঠিন সময়ে চালকের আসনে ম্যার্কেলের ভূমিকার প্রশংসা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় ম্যার্কেলের সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন জার্মান প্রেসিডেন্ট৷ ম্যার্কেলের চতুর্থ এবং শেষ কার্যকালে ব্রেক্সিটের মতো ধাক্কা এবং অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্পকে সামলানোর জন্যও স্টাইনমায়ার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷ তার ভাষণে আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উষ্ণতার ছোঁয়াও দেখা গেছে৷
কার্যনির্বাহী সরকারের প্রধান হিসেবেও ম্যার্কেলের ব্যস্ততা শেষ হচ্ছে না৷ বুধবারই তিনি বার্লিনে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহকে স্বাগত জানাচ্ছেন৷ গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা উষ্ণতার সঙ্গে তাকে বিদায় জানিয়েছেন৷ ইটালিতে জি-টোয়েন্টি গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলন এবং আগামী সপ্তাহে ব্রিটেনের গ্লাসগো শহরে জাতিসংঘের পরিবেশ সম্মেলনেও তিনি জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করবেন৷
সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি, উদারপন্থি এফডিপি ও পরিবেশবাদী সবুজ দলজোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে বুধবার থেকে বড় আকারে আলোচনা শুরু করছে৷ ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই সরকার গঠনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন দলের নেতারা৷ সে ক্ষেত্রে ৬ই ডিসেম্বর নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে ওলাফ শলৎস শপথ নেবেন৷ বাস্তবে সেই পরিকল্পনা সত্যি কার্যকর হলে ম্যার্কেল সামান্য কয়েক দিনের জন্য ফেডারেল জার্মানির ইতিহাসে চ্যান্সেলর হিসেবে দীর্ঘতম কার্যকালের রেকর্ড ভাঙতে পারবেন না৷ ১৯৮২ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত হেলমুট কোল পাঁচ হাজার ৮৭০ দিন জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ কমপক্ষে ১৯শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারলে তবেই ম্যার্কেল সেই রেকর্ড ভাঙতে পারবেন৷ তাঁকে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বিচলিত হতে দেখা যায়নি৷ নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে তিনি ‘নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন' বলে আশা করছেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এপি)