আদিবাসী, নাকি উপজাতি?
১৪ ডিসেম্বর ২০১৬আজকাল যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার এক ভালো মাধ্যম ফেসবুক৷ সেখানে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘‘বাংলাদেশে উপজাতিরা সরকারের কাছ থেকে কি বিশেষ কোনো সুযোগ সুবিধা পান? পেলে সেগুলো কী কী?'' আমার কয়েকজন ফেসবুক বন্ধু প্রশ্নটি ঠিক পছন্দ করেননি৷ তাঁদের আপত্তি উপজাতি শব্দটি নিয়ে৷ তাঁদের কথা হচ্ছে, উপজাতি নয়, কথাটা হবে আদিবাসী৷''
আমার সুযোগ-সুবিধার হিসেব ছেড়ে আলোচনাটা তাই চলে গেল আদিবাসী নাকি উপজাতি – সেই দিকে৷ উপায়ান্তর না দেখে আমি যোগাযোগ করি একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিশেষজ্ঞের সঙ্গে৷ তিনি আমাকে বোঝালেন এই বিতর্কের উৎস নিয়ে৷ ২০০৯ সালেও আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করেছে৷ কিন্তু তারপরই বদলে গেছে বিষয়টি৷ কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সেই বিশেষজ্ঞ জানান, অনেকে মনে করেন আদিবাসী মানে আদি বাসিন্দা৷ আর বাংলাদেশের আদি বাসিন্দা হতে হবে বাঙালিদের৷ তাই তারা আদিবাসী নন, উপজাতি৷
বাংলাদেশের সংবিধানের একটি ধারাও ইন্টারনেটে পেলাম যেখানে লেখা হয়েছে, ‘২৩ক. রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷' খেয়াল করলে দেখবেন এখানে পরিষ্কারভাবে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি৷
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তারা আরো অনেক অধিকার পাবেন৷ ২০০৭ সালে পাস হওয়া ‘ইউনাইটেড নেশনস ডিক্লারেশন অফ দ্য ইন্ডিজিনিয়াস পিপলস' বা ইউএনডিআরআইপি অনুযায়ী, আদিবাসীদের নিজেদের উন্নয়নের ধারা নিজেদের নির্ধারণ, এবং আত্মনিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অধিকার তাদের প্রাপ্য হয়ে উঠবে৷ বাংলাদেশ সরকার সেটা দিতে রাজি নয়, পার্বত্য অঞ্চলও বেসামরিকীকরণের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই৷ তাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোকে উপজাতি হিসেবে বিবেচনাই নিরাপদ৷ ফলে সেই ডিক্লারেশনে স্বাক্ষরও করেনি বাংলাদেশ৷
দেখা যাচ্ছে, আদিবাসী শব্দটির গুরুত্ব অনেক৷ আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো চান তাদের সে নামেই অবিহিত করা হোক৷ ফেসবুক ঘেঁটে যেটা বুঝলাম, সাধারণ মানুষেরও তাতে বিশেষ আপত্তি নেই৷ যদিও মার্কিন নির্বাচনের পর ফেসবুক আর বাস্তব দুনিয়ার ফাঁরাক যে কতটা, তা বোঝা গেছে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যাকে দিনের পর দিন নাস্তানাবুদ করা হয়েছে, সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পই এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ বোঝাই যায়, ফেসবুকে যতটা উদারতা অনেকে দেখান, বাস্তবে আসলে তাঁরা ততটা উদার নন৷
যাহোক, আদিবাসী, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী – যেটাই বলা হোক না কেন, এ সব গোষ্ঠীকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র একটি অধিকার সুনির্দিষ্টভাবেই দিচ্ছে৷ এঁরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পান৷ এই সুবিধা তাঁদের উন্নতির পথে সহায়তা করছে৷ তবে তা পর্যাপ্ত নয়৷ বরং শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করা গেলে তাঁদের জীবন আরো শান্তিপূর্ণ হবে বলে আমি মনে করি৷
আপনার কি এ বিষয়ে কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷