আত্মসমালেচনায় বিএনপি: শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ খালেদা
১৪ নভেম্বর ২০১৪
তাই বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷
পরবর্তী কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলীয় নেতারা এখন বিভিন্ন জেলা সফর করছেন৷ সরকারের ব্যাপক সমালোচনা ছাড়াও পরবর্তী আন্দোলনের জন্য দলকে চাঙ্গা করা এবং সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করাই এসব সফরের আসল উদ্দেশ্য৷ সর্বশেষ কিশোরগঞ্জের জনসভায় খালেদা জিয়া আবারো নেতা-কর্মী এবং দেশের সাধারণ মানুষকে সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷
তবে সেই দলের শীর্ষ নেতাদের ওপরই ভরসা রাখতে পারছেন না বেগম খালেদা জিয়া৷ কিশোরগঞ্জ থেকে ফিরে এসে বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে তা স্পষ্ট হয়েছে৷ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তা জানা যায়৷
জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরবর্তী কৌশল নির্ধারণে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক ডাকা হয়৷ গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন৷
জানা যায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পুরোটা সময় নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন৷ তিনি আন্দোলনে নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ অনেকটা ক্ষোভের সুরেই নেতাদের কাছে জানতে চান, ‘‘আমি আন্দোলনে রাস্তায় নামব, আপনারা তখন পাশে থাকবেন তো?''
এসময় খালেদা জিয়া ৮ই নভেম্বরের কর্মসূচি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং কেন নেতাকর্মীরা আসেননি তা জানতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘ঢাকা মহানগর দ্রুত গোছাতে হবে৷ এখনো পর্যন্ত মহানগরে সংগঠন গোছানোর কার্যক্রম হতাশাব্যঞ্জক৷ রাজধানীতে কঠোর আন্দোলন করতে হবে৷ কিন্তু এ উদ্দেশ্য বাস্তাবায়নে তেমন জোরালো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না৷''
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য তখন খালেদাকে বলেন, ‘‘৮ই নভেম্বরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হরতাল ডাকা উচিত ছিল৷'' খালেদা জিয়া তখন বলেন, ‘‘হরতাল দিয়ে তো মাঠে থাকেন না৷'' নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘আপনারা আমাকে সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারছেন না৷''
বৈঠক সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরের জনসভাগুলো শেষ হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে এমন সিদ্ধান্ত হয়৷ আন্দোলনে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে অধিকাংশ নেতা একমত পোষণ করেন৷
স্থায়ী কমিটির বৈঠক নিয়ে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, ‘‘আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে সরকার বিএনপিকে নেতৃত্ব শূন্য করার ষড়যন্ত্র করছে৷ এ কারণে স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দেয়া হচ্ছে৷ পুরনো মামলায় জড়ানো হচ্ছে৷''
তিনি আরও বলেন, ‘‘সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জের মেয়র জি এম গউসকে জড়িয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে – যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থায়ী কমিটি৷'' একইভাবে যশোরের পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম, মনিরামপুরের পৌর মেয়র ইকবাল, বাঘাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিশয়ার রহমান, কেশবপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুস সামাদ বিশ্বাস ও পৌর মেয়র মনার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা' দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷ তবে মীর্জা ফখরুল বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি৷
তাঁর কথার জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপি-র আন্দোলন কর্মসূচিতে সরকার কোনো বাধা দিচ্ছে না৷ যদি বাধা দিত, তাহলে বেগম খালেদা জিয়া জেলায় জেলায় সমাবেশ করতে পারতেন না৷'' তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির আন্দোলন কেন জমছে না, তা বিএনপিই বলতে পারবে৷ তাদের আন্দোলন তো আর সরকার করে দেবে না৷ জনসমর্থন না থাকায় তারা কিছু করতে পারছে না৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘এ দেশে রাজনৈতিক অধিকার সবার আছে৷ সরকার সেই অধিকারে কখনোই বাধা দেয়নি, দেবে না৷ তবে বিএনপি নিজেদের ব্যর্থতা আর হতাশার দায় সরকারের ওপর চাপাতে চায়৷ এটা তাদের পুরনো অভ্যাস৷''
কিবরিয়া হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘২০০৪ সালে বিএনপি-র শাসনামলে প্রকাশ্য জনসভায় শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়৷ বিএনপির নেতা-কর্মীরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলেই তখন তারা এর বিচার করেনি৷ আর এখন বিচারের উদ্যোগ নেয়ায় তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷ অপরাধীদের অবশ্যই বিচার হবে৷''