১২ই জুন ট্রাম্প-কিম সাক্ষাৎ
১১ মে ২০১৮ট্রাম্প কিম জং উনের সঙ্গে তাঁর পরিকল্পিত সাক্ষাতের কথা ঘোষণা করেন স্বভাবসিদ্ধভাবে একটি টুইটের মাধ্যমে: ‘‘কিম জং উন ও আমার বহুল প্রত্যাশিত সাক্ষাৎটি সংঘটিত হবে সিঙ্গাপুরে, ১২ই জুন তারিখে৷আমরা দু'জনেই (এই সাক্ষাৎকে) বিশ্বশান্তির জন্য একটি বিশেষ মুহূর্তে পরিণত করার চেষ্টা করব৷''
এই প্রথম একজন ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ শাসকের সঙ্গে মিলিত হবেন৷
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পেন্স গত কয়েক মাসের মধ্যে দু'বার উত্তর কোরিয়া যাত্রা করেছেন ও কিম জং উনের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন৷ দৃশ্যত তাঁর এই দু'টি সফরের উদ্দেশ্য ছিল: ট্রাম্প ও কিমের মধ্যে সাক্ষাতের প্রস্তুতি নেওয়া৷
ট্রাম্পের ঘোষণার একদিন আগে উত্তর কোরিয়া তিনজন মার্কিন বন্দিকেমুক্তি দেয়৷ ট্রাম্প এজন্য কিমকে ধন্যবাদ জানান ও এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, কিম তাঁর দেশকে ‘‘বাস্তব জগতে'' নিয়ে আসতে চাইছেন৷
অ্যান্ড্রুজ সামরিক বিমানঘাঁটিতে সদ্য যুক্তরাষ্ট্রে আগত বন্দিদের স্বাগত জানানোর সময় ট্রাম্প বলেন, তাঁর ও কিমের ‘‘বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কিছু একটা করার খুব ভালো সুযোগ রয়েছে৷''
‘‘আমার সবচেয়ে গর্ব করার মতো অর্জন হবে, যখন আমরাগোটা (কোরিয়া) উপদ্বীপটিকে পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত করতে পারব৷''
সপ্তাহ দুয়েক আগে কিম দক্ষিণ কেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে মিলিত হন৷ উভয়ের এই সাক্ষাৎকে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য বলে স্বাগত জানানো হয়৷ এ সপ্তাহে কিম চীন যাত্রা করেন ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে মিলিত হন৷ ১৯৪৮ সালে যাবৎ চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেশ৷
উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে শান্তি আনয়নের প্রচেষ্টা ট্রাম্পের নীতির দিক পরিবর্তন সূচিত করে৷ গতবছর তাঁর বিভিন্ন অগ্নিগর্ভ টুইট কোরিয়া উপদ্বীপে সশস্ত্র সংঘাতের আশঙ্কা উদ্রেক করেছিল৷ কিন্তু বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কে যে গতিময়তা এসেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন৷
বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের ঘোষণার পর সৌলে সরকারি কর্মকর্তারা বলেন যে, তারা আসন্ন ট্রাম্প-কিম সাক্ষাৎ থেকে ভালো ফলাফলের আশা করেন৷ সিঙ্গাপুরে আগামী ১২ই জুন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উনের সাক্ষাৎকে স্বাগত জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘‘এই সাক্ষাতের মাধ্যমে কোরিয়া উপদ্বীপে পারমাণবিক অস্ত্র বর্জন ও স্থায়ী শান্তি সম্ভব হবে, বলে আমাদের আশা৷''
সৌল ও পিয়ংইয়াং এযাবৎ সরকারিভাবে কোরিয়া যুদ্ধের অবসান ঘোষণা করেনি, যদিও কোরিয়া যুদ্ধ বস্তুত ১৯৫৩ সালেই সমাপ্ত হয়৷
পিয়ংইয়াং তার পারমাণবিক সমরাস্ত্র পরিত্যাগ করতে পারে, বলে উত্তর কোরিয়া আভাস দিয়েছে৷ পরিবর্তে পিয়ংইয়াং সৌল ও ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কী দাবি করবে, তা এখনও অজ্ঞাত৷ দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৫,০০০ মার্কিন সৈন্য স্থাপিত আছে এবং মার্কিন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী নিয়মিতভাবে সামরিক মহড়ার উপস্থাপনা করে থাকে – উত্তর কোরিয়ার যা আদৌ পছন্দ নয়৷
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার উপর ‘পারমাণবিক ছত্রধারণের' প্রতিশ্রুতি দিয়েছে – অর্থাৎ মিত্রদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার উপর পারমাণবিক আক্রমণের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা আঘাত হানবে, বলে প্রত্যাশা করা যেতে পারে৷
২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়া তার প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে এবং সাম্প্রতিক কয়েক বছরে তার পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভারের সম্প্রসারণ ও উন্নতি ঘটিয়েছে৷ মূল মার্কিন ভূখণ্ডে আঘাত হানার মতো পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র এখন তাদের হাতে আছে, বলে উত্তর কোরিয়া দাবি করে থাকে৷