মোদীর ‘‘ভিশন-ইন্ডিয়া’’
১০ জুন ২০১৪বাস্তবোচিত সংস্কার এবং রূপায়ণযোগ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং যার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলবে সামাজিক বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা৷ এটাই মোদী সরকারের ‘‘ভিশন-ইন্ডিয়া''৷
এতে স্থান পায় পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা নীতি৷ ভারতের আর্থিক প্রবৃদ্ধিকে একটা শক্ত ভিতে দাঁড় করানোই মোদী সরকারের মূল লক্ষ্য, বর্তমানে যা তলানিতে এসে ঠেকেছে৷ এটাকে সঠিক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে৷ পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণ এবং দারিদ্রমোচনকে দেয়া হবে অগ্রাধিকার৷ সোমবার ষোড়শ সংসদের যুক্ত অধিবেশনে সেই কথাটাই উঠে আসে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভাষণে জোরেসোরে৷
মোদী সরকারের দশটি প্রাথমিক অ্যাজেন্ডার মধ্যে আছে দারিদ্র মোচন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি বিকাশ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতা, স্বচ্ছ ও সময়-ভিত্তিক সরকারি পরিষেবা দেয়া, আমলাতন্ত্রের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনে কাজের স্বাধীনতা দেয়া, সরকারি কাজকর্মের ‘সিস্টেম' বা প্রক্রিয়াকে নাগরিক বান্ধব করে তোলা, দুর্নীতিমুক্ত ও দায়বদ্ধ প্রশাসন, সেকেলে আইনের বিলোপসাধন ইত্যাদি৷
সামাজিক কল্যাণের রোডম্যাপে আছে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রত্যেকের জন্য পাকা বাড়ি, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, টয়লেট, দেশের মাদ্রাসাগুলির উন্নতিসাধন, সংসদে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ, মহিলাদের ওপর নির্যাতনরোধে ফৌজদারি আইনবিধি কঠোর করা তথা যৌন নির্যাতনে ‘‘জিরো-টলারেন্স'' আর সকলের সুচিকিৎসার জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য প্রকল্প এবং পূণ্যতোয়া গঙ্গা নদীকে দুষণমুক্ত করা ইত্যাদি৷
অবকাঠামো ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেয়া হবে রেল পরিবহন, সমুদ্র ও বিমান বন্দর উন্নয়নের ওপর৷ জার্মানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চতুর্ভুজ রেল করিডর নির্মাণ হবে, যেখানে উচ্চগতির ট্রেন চলাচল করবে৷ বাড়ানো হবে ভারতের পার্বত্য রাজগুলিতে রেল যোগাযোগ৷ ছোট ও মাঝারি শহরগুলিতে বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে পর্যটনের সুবিধার জন্য৷ পুরানো সমুদ্র বন্দরগুলির আধুনিকীকরণের পাশাপাশি নতুন সমুদ্র বন্দর তৈরি করা হবে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে৷ প্রতিরক্ষা শিল্পে বিদেশি বিনিযোগকে স্বাগত জানানো হবে, যদি তা কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে পারে৷
পররাষ্ট্রনীতিতে জোর দেয়া হবে সার্ক সংগঠনকে পুনর্জ্জীবিত করে প্রতিবেশি দেশগুলির সঙ্গে সদ্ভাব জোরদার করা৷ তারই প্রাথমিক সূচনা হয় মোদী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্ক দেশগুলিকে আমন্ত্রণ করে৷ উপস্থিত সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেরও ব্যবস্থা করা হয়৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সোজাসাপটা জানিয়ে দেয়া হয় ভারত পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাস একেবারেই বরদাস্ত করবে না, অর্থাৎ এক্ষেত্রেও ‘‘জিরো-টলারেন্স''৷
এছাড়া জম্মু-কাশ্মীরের কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পৈতৃকভূমিতে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করা হবে৷ সেইসঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয় রাষ্ট্রপতির ভাষণে৷ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গতি আনতে জুন মাসেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যাচ্ছেন ঢাকায়৷ চীনের সঙ্গে বৈরিতা কম করতে ভারত তার সীমান্তে প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে ব্যবসা-বাণিজ্য চলবে যথারীতি৷
বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণ যেন বিজেপির নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পুনরাবৃত্তি৷ নতুনত্ব কিছু নেই৷ আসল কথা হচ্ছে, সব দলই প্রথম প্রথম দেশকে স্বর্গরাজ্য বানাতে চায় ক্ষমতায় এসে৷ পাঁচ বছর পর দেখা যায় পর্বতের মূষিক প্রসব হয় নানা কারণে৷ তবে এবার শাসকদল যেহেতু বিপুল জনসমর্থন পেয়েছে, তাই জোটধর্ম পালনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷