নতুন নজির সৃষ্টির পথে বিজেপি
২৫ মে ২০১৪সোমবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সার্কভুক্ত পড়শি দেশগুলির সরকার প্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়ে হবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক অভূতপূর্ব নজির রাখলেন৷ দিল্লির কূটনৈতিক মহল মনে করছেন, ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে মৈত্রীর একটা তাজা হাওয়া আনতে চাইছেন মোদী৷
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক বাধাগুলি কার্পেটের তলায় না রেখে প্রথম দিন থেকেই তার মুখোমুখি হওয়া জরুরি৷ আগেকার কংগ্রেস জোট সরকার সেভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷ ভারতের নেতৃত্বে এই অঞ্চলকে সংঘবদ্ধ করে এক আর্থিক কেন্দ্রে পরিণত করার যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে পেরেছে বিজেপি সরকার৷ শুধু উন্নত দেশগুলির সহযোগিতা যথেষ্ট নয়৷
তবে মোদীর মূল লক্ষ্য পাকিস্তানের সঙ্গে মোদী সরকারের তাল মিলটা কেমন হতে পারে – এই সুযোগে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তা ঝালিয়ে নেয়া৷ বিশেষ করে মোদী-নওয়াজ শরিফের ‘কেমিস্ট্রিটা' কেমন হতে পারে৷ বিজেপির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর সঙ্গে নওয়াজ শরিফের রসায়ন অনুকূল ছিল বলেই বাজপেয়ী লাহোর শান্তি সফরে গিয়েছিলেন দু'দেশের সম্পর্কটা সদর্থক করতে৷ কিন্তু তা ভেস্তে দিয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক কর্তারা কারগিল যুদ্ধ শুরু করে৷
তাই এবারে মোদীর আমন্ত্রণে নওয়াজ শরিফ পড়েছেন উভয় সংকটে৷ নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েও সামরিক কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে স্বেচ্ছায় আসতে পারা তাঁর পক্ষে মুশকিল৷ সামরিক কর্তাদের উপেক্ষা করার শক্তি নেই তাঁর৷ ভারত-পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃত্ব অনেকবার বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে চাইলেও সামরিক বাহিনীর চাপে পাকিস্তান তাতে এগোতে পারেনি৷ তবে জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএ শনিবার জানিয়েছে, ভারতের হবু প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ নওয়াজ শরিফ গ্রহণ করেছেন এবং শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
অন্যদিকে মোদী নিজে ফাঁপরে পড়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসকে আমন্ত্রণ জানিয়ে৷ দক্ষিণী রাজ্য তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দলগুলি এতে বেজায় খাপ্পা মোদীর ওপর৷ শ্রীলঙ্কার তথাকথিত তামিল নিধনে রাজাপাকসের ভূমিকা থাকার অভিযোগে তামিল জনমানসের ক্ষত এখনো শুকায়নি৷ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়ে মোদী কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা৷ একই সুর বিজেপি সহযোগী এমডিএমকে নেতার৷ বিজেপির তরফে অবশ্য বিষয়টিকে হাল্কা করার জন্য বলা হয়েছে, রাজাপাকসেকে আমন্ত্রণ জানানোর অর্থ সেখানকার তামিল জনগোষ্ঠীর অধিকারের সঙ্গে আপোষ করা নয়৷ করুণানিধির ডিএমকে দলের মতে, তামিল নিধনযজ্ঞ আর আমন্ত্রণ একসঙ্গে চলতে পারে না৷ তামিল আবেগকে মাথায় রেখে মনমোহন সিং শ্রীলঙ্কায় কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যাননি৷ বিপুল জনাদেশে জয়ী মোদী পররাষ্ট্র নীতিতে অন্য দলের ছড়ি ঘোরানো বরদাস্ত করবেন না এটাই বোঝাতে চেয়েছেন৷
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কথা৷ তিস্তা জল বণ্টন চুক্তি এবং স্থলসীমা চুক্তি প্রায় হয়েই আছে, শুধু সরকারি শিলমোহর পড়া বাকি৷ তবে স্থলসীমা চুক্তির ক্ষেত্রে কিছু প্রকরণগত প্রক্রিয়া বাকি৷ যেহেতু সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূখণ্ড হস্তান্তরের প্রশ্ন আছে তাই সংবিধান অনুযায়ী সংসদের অনুমোদন জরুরি৷ নতুন সংসদে বিজেপির যেহেতু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, তাই অন্য দলের বিশেষ করে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূলের সমর্থন না পেলেও মোদী দমবার পাত্র নন৷