বিএনপি আন্দোলনে
২২ নভেম্বর ২০১৩আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে৷ নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ পুরো প্রস্তুতি নিয়ে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে৷ কিন্তু সঙ্গে নেই বিএনপি৷
বৃহস্পতিবার গঠন করা হয়েছে নির্বাচনকালীন সরকার৷ তবে সেই সরকারে অংশ নেয়নি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি৷ সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগ এখন পুরোপুরি নির্বাচনমুখী৷ ওদিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সব আশা ছেড়ে এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ের কৌশল বেছে নিয়েছে৷ এর অংশ হিসেবে আগামী সোমবার থেকে টানা হরতাল আর অবরোধের পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির৷ এই অবস্থায় আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন আর সংসদ অধিবেশন শেষ হয়ে যাওয়ায় সমঝোতার আর আশা নেই৷ নেই সুযোগও৷ কারণ সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ায় নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়া নতুন করে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থায় ফেরার কোনো পথ খোলা নেই৷ পাশাপাশি বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হওয়ায়, বিএনপির সামনে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলেই মনে করছেন দলটির নেতারা৷ এমন পরিস্থিতিতে সামনের সময়ে রাজপথে সহিংসতা আর হানাহানি ছাড়া অন্য কিছু দেখা যাচ্ছে না৷
বিশ্লেষকদের কথায়, আওয়ামী লীগ তার মিত্রদের নিয়ে যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেছে তা দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে না৷ কারণ, প্রধান বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না কখনোই৷ এছাড়া, আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকারে যাঁরা আছেন তাঁদের সবাই বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের অংশীদার হয়েই নির্বাচন করেছিল৷ এ কারণে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ১৮ দলীয় জোটে ভেঙে সেখান থেকে দু-একটি দলকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে৷ এমনকি, নির্বাচনকালীন সরকারে তাঁদের মন্ত্রীত্ব বা মন্ত্রী পদমর্যাদায় সরকারের উপদেষ্টা করার চেষ্টা চলছে৷ বিশেষ করে কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদের এলডিপি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারাকে সরকারের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য জোর চেষ্টা চলছে৷ তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরা আসেন কিনা, সেটাই দেখার৷ প্রসঙ্গত, এই দুটি দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে আছে৷
বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক বলেছেন, জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর সমঝোতার আর কোনো সুযোগ রইল না৷ এখন আর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কোনোভাবেই সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে না৷ সংসদ অধিবেশন শেষ হয়ে যাওয়ায় দুই জোটের মধ্যে আর আলোচনারও সুযোগ নেই৷ তাঁর মতে, বিএনপির সামনে এখন মাত্র দুটি পথ খোলা রয়েছে৷ এর একটি, যা কিছু হয়েছে তার সব কিছু মেনে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া৷ অপরটি হলো, আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে সরকারকে বাধ্য করা৷ কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, প্রথম পথে বিএনপি যাবে না বা যাওয়ার সুযোগও নেই৷ তাই তারা এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে৷
বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারে বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তে আশাহত হয়েছে বিরোধী দল বিএনপি৷ সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাষ্ট্রপতি তাঁকে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন৷ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিরোধী দলীয় নেতার সাক্ষাতের পর এ রকম সিদ্ধান্ত হয়ত আশা করা যায় না৷ তিনি বলেন, বিএনপি আশা করেছিল, রাষ্ট্রপতি দেশের ১৬ কোটি মানুষের ‘অভিভাবক' হিসাবে সংকট নিরসনে দুই দলের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নেবেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আবারো রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি সময় এখনও শেষ হয়নি৷ আপনি সমঝোতার উদ্যোগ নিন৷'' বিএনপিকে বাদ দিয়ে ‘একতরফা' নির্বাচন করতে দেয়া হবে না বলেও সরকারকে হুঁশিয়ার করেন বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ৷ তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সে চেষ্টা করলে ভুল করবে৷''