আইভী-শামীম ‘লড়াই' করে, গ্রেপ্তার হয় তৈমুর
২৩ জানুয়ারি ২০১৮বিএনপি'র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে পুলিশ মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তার করে৷ তাঁকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাঁদমারি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ পুলিশ জানায়, তাঁকে ২০১৫ সালের একটি বিস্ফোরক দ্রব্য, গাড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশের ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
পুলিশ দাবি করে, ‘‘২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ এলাকায় মিছিল বের করে পুলিশের ওপর হামলা চালান তৈমূর আলম ও তার লোকজন৷ তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান৷ এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে৷ মামলায় ওয়ারেন্ট জারি হলে তৈমুর আলম খন্দকার পলাতক ছিলেন৷''
তৈমুরের গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিএনপি ইতিমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেছেনন, ‘‘এটাই হলো শেখ হাসিনার বাংলাদেশ৷ যেখানে গ্রেপ্তার হবে শামীম ওসমান, আইভী, সেখানে গ্রেপ্তার করা হলো বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকারকে৷ বর্তমান সরকার তাদের সব ব্যর্থতার দায় বিএনপির ওপর চাপাতে চায়৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘নরায়ণগঞ্জের ঘটনা দেশের সবাই জানে৷ কিন্তু দায়ীদের না ধরে পুরনো একটি কথিত মামলায় বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলো৷ আওয়ামী লীগ তাদের খুন, গুম অপকর্মের দায় এভাবেই এড়ানোর চেষ্টা করছে৷''
গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীএবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়৷ রাস্তায় হকার বসবে কি বসবেনা সেই দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে নারাণগঞ্জ চাষাড়া এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ সংঘর্ষে আইভীসহ অর্ধশত আহত হন৷ সাংবাদিকদের ওপরও হামলা হয়৷ আইভী পুনর্বাসনের শর্তে সড়ক থেকে হকারদের উচ্ছেদ করতে চান৷ কিন্তু শামীম ওসমান এর বিরোধিতা করেন৷ আইভী, শামীম দু'জনই শাসক দল আওয়ামী লীগের নেতা৷ ওই সংঘর্ষে যুবলীগের নেতা নিয়াজুলকে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে গণপিটুনি খেতে দেখা যায়৷ পুলিশ এখনো সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো মামলা নেয়নি৷ তবে মঙ্গলবার আইভীর পক্ষে থেকে ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় থানায় একটি অভিযোগ করা হয়৷ সংঘর্ষের পর ১৮ জানুয়ারি আইভী অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার তিনি নারায়ণগঞ্জে ফিরেছেন৷
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার অভিযোগ করেন, ‘‘১৬ জানুয়ারি আইভীকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর হামলা করা হয়৷'' ঘটনার দিন অস্ত্র প্রদর্শনকারী নিয়াজুল ইসলাম খান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত প্রায় এক হাজার জনকে আসামি করে এ অভিযোগ করা হয়৷
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মাঈনুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সেলিনা হায়াৎ আইভী'র পক্ষে আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি৷ মামলা হিসেবে সেটিকে এখনো গ্রহণ করা হয়নি৷ আমরা তদন্ত করে তারপর সিদ্ধান্ত নেবো৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ওই সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি৷ আর অস্ত্রধারী নিয়াজুলকে খুঁজছি, এখনো পাইনি৷''
তৈমূর আলম খন্দকারের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তাঁকে আদালতের ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে পুরনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাঁকে গ্রেপ্তারের অন্য কোনো কারণ নাই৷ তিনি নিয়মিত হাজিরা দিলে তো আর গ্রেপ্তার হতেন না৷''
তবে মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন নারায়ণগঞ্জে জননিরাপত্তার জন্য যা প্রয়োজন পুলিশ তা করছে না৷ আইভী এবং শামীম ওসমানের দ্বন্দ্বে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত৷ ১৬ জানুয়ারির সংঘর্ষে যারা জড়িত, যাদের অস্ত্র হাতে দেখা গেছে, তাদের কাউকেই এখনো আটক করা হয়নি৷ আর উল্টো একটি পুরণো মামলায় বিএনপি নেতা তৈমুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, মূল ইস্যুকে পাশ কাটাতে তৈমুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ শাসক দলের যারা নারায়ণগঞ্জে অশান্তি এবং সন্ত্রাসের জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না৷'' তাঁর মতে. ‘‘পুলিশ এখানে সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করছে না৷''