1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইএমএফের শর্তেই কেন ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ?

২৯ অক্টোবর ২০২২

বাজেট সহায়তায় আইএমএফের শর্ত মেনেই ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। আর ডিসেম্বরের মধ্যেই ৪৫০ ( ৪.৫ বিলিয়ন) কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড় হতে পারে।

https://p.dw.com/p/4Ipm4
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় সংকট এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় সংকট এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভছবি: picture-alliance/dpa

কেন আইএমএফের শর্তেই বাংলাদেশ এই ঋণ নিচ্ছে। আর এই শর্তপূরণ বাংলাদেশের পক্ষে আদৌ কতটা সম্ভব হবে।

ঋণের ব্যবহার এবং ঋণ শোধ কীভাবে হবে তাও নিয়ে প্রশ্ন আছে।

ঋণের শর্ত নিয়ে এরইমধ্যে ঢাকায় আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে শর্তগুলো মেনে নেয়ার আভাস দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নির্ধারণে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ, ব্যাংকের সুদ হারের সীমা প্রত্যাহার, বৈদেশিক মুদ্রার ভাসমান বিনিময় হার, খেলাপি ঋণ কমানো ও সংজ্ঞা পরিবর্তন এবং জ¦লানি তেলের ভর্তুকি  কমানো । এর বাইরে ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কার, কর ব্যবস্থাপনাকে দক্ষ করে কর আদায় বাড়ানো অন্যতম।

রিজার্ভ:

বাংলাদেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে তিন হাজার ৫৮৫ কোটি(৩০.৫৮৫ বিলিয়ন) ডলার। এই রিজার্ভের ৭০০ কোটি ডলার দিয়ে গঠন করা হয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল।  রিজার্ভের আরো ৮০০ কোটি ডলার দিয়ে লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) গঠন ছাড়াও  বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে ও সোনালি ব্যাংককে অর্থ দেওয়া হয়েছে।

পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতেও রিজার্ভ থেকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। আইএমএফেরযে হিসাব পদ্ধতি তাতে এইসব খাতে রিজার্ভ থেকে বরাদ্দ দেয়া মোট ৮০০ কোটি ডলার বাদ দিতে হবে।  সরকার এখন যে রিজার্ভের কথা বলছে তা আরো কমে গিয়ে দাঁড়াবে দুই হাজার ৩০০ কোটি(২৭ বিলিয়ন) ডলার। আইএমSফ এছাড়াও কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছে।

সুদের হার:

বাংলাদেশে এখন ব্যাংকের সুদের হার সর্বোচ্চ শতকরা বছরে ৯ টাকা বেধে দেয়া আছে। আইএমএফ এটাকে বেধে না দিয়ে ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দিতে বলছে। বছরে দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা চায় তারা।

খেলাপি ঋণ:

খেলাপি ঋণ পরিস্থিরি উন্নতি চায় তারা।আর তিন মাস মাস কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে খেলাপি ঋণ হিসাবে চিহ্নিত করার পক্ষে। এখন বাংলাদেশে এখন খেলাপি ঋণ বাড়ছে। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিলো এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ হিসেবে জুন মাসে তার পরিমাণ হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাই মাসে ঋণ খেলাপিদের জন্য বড় ধরনের ছাড় দেয়। ঋণের শতকরা আড়াই থেকে চার শতাংশ  অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয়। এর আগে এটা ছিলো শতকরা ১০  শতাংশ।

বিনিময় হার:

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ৯৭ টাকা দামে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ডলারের দাম ১০০-১০৩ টাকা । প্রবাসী আয়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম দিচ্ছে ১০৭ টাকা। আর রপ্তানি আয় নগদায়ন করছে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এটা নিয়ে আপত্তি আছে আইএমএফের। তারা বলছে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। কারণ এখন যেভাবে হচ্ছে তাতে ডলারে বিনিময় হার নিয়ে বিভ্রান্তির আশঙ্কা আছে।

কেন এই সব শর্তে ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সিরডাপের পরিচালক(গবেষণা) ড. মোহামম্মদ হেলাল উদ্দিন  বলেন," আইএমএফ যে শর্তই দিক না কেন ওই শর্তগুলো নিয়ে দর কষাকষির মতো অবস্থানে বাংলাদেশের অর্থনীতি নেই। তাই বাংলাদেশকে ঋণ নিতেই হচ্ছে। তবে শর্তগুলো যে সব খারাপ তা কিন্তু নয়।  অনেক শর্ত আছে যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ভালো।”

"দেশীয় সম্পদের ঠিকমতো ব্যবহার হয়নি”

তার কথায়," বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় সংকট এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এখন যে রিজার্ভের কথা বলা হচ্ছে প্রকৃত রিজার্ভ তার চেয়ে কম। আইএমএফের ঋণের সুদের হার কম এবং এটা দীর্ঘমেয়াদি। ফলে এটার চাপ কম হবে কিন্তু রিজার্ভের ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।”

আর  সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সামেন) এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন," ব্যাংক আর্থিক খাতের সংস্কার, রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নতি, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির উন্নতি এগুলো আগেই করার দরকার ছিলো। কিন্তু এখন যেটা হবে সরকারকে বাধ্যমূলকভাবে করতে হবে। দ্রুত করতে হবে।”

তিনি বলেন," আইএমএফের কাছ থেকে গত এক দশকে সরকার কোনো ঋণ নেয়নি। এবার কেন বড় ধরনের ঋণ নিতে হচ্ছে। কারণ অর্থনীতি চাপের মুখে আছে।  রিজার্ভ সংকট কাটাতে এবং বাজেট সহায়তার জন্য এই ঋণ নিতেই হবে।”

ঋণের সঠিক ব্যবহার না হলে সংকট আরো বাড়বে:

ড, সেলিম রায়হান বলেন," বাংলাদেশের বৈদেশি ঋণ বাড়ছে সত্য কিন্তু সংকটজনক জায়গায় যায়নি। তবে ২০২৬ সালের পর প্রতি বছর বাংলাদেশকে চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলার সুদসহ ঋণ ফেরত দিতে হবে। তখন একটা চাপ সৃষ্টি হবে। তাই ঋণ যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না হয় তাহলে সংকট হবে।”

”খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির উন্নতি আগেই করা উচিত ছিল”

অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন বলেন," অতীতে ঋণ এবং দেশীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার হয়নি বলেই তো এখন অর্থনীতির এই খারাপ অবস্থা। উন্নয়ন প্রকল্পসহ নানা খাতে প্রকৃত খরচের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ বেশি খরচ করা হয়েছে। সেটা যদি না করা হতো তাহলে অর্থনীতির তো এই অবস্থা হতোনা। সামনে মন্দা বা দুর্ভিক্ষের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের তো মানুষকে তার ফান্ড থেকে খাওয়ানোর সক্ষমতা নেই। তাই সরকারকে এবার ঋণ সঠিকভাবে খরচ করতে হবে। মিতব্যয়ী হতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।”

বাংলাদেশের এখন বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ৩০০ কোটি( ৯৩ বিলিয়র) ডলার। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৩ সালে এই ঋণের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন এবং ২০২৪ সালে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।