1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আইএমএফের ঋণ পেতে’ জনগণের উপর চাপ

৬ আগস্ট ২০২২

জ্বালানি তেলের নজিরবিহীন দাম বাড়ায় বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতি৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএমএফ এর ঋণ পেতেই জনগণের উপর অযৌক্তিক চাপ বাড়িয়েছে সরকার৷

https://p.dw.com/p/4FDJc
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর ব্যস্ততা বেড়েছে
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর ব্যস্ততা বেড়েছেছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পরপরই পাম্পগুলোতে যানবাহনের লম্বা লাইন পড়ে৷ কোথাও কোথাও হামলার খবরও পাওয়া গেছে৷ যানবাহন চলাচল বলতে গেলে বন্ধই রয়েছে৷

এরইমধ্যে গণপরিবহণের ভাড়া আনুষ্ঠানিকভাবেই বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সবক্ষেত্রে৷ শিল্প উৎপাদন ও কৃষিখাত নিয়ে সবচেয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷

সারাদেশে এ নিযে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন প্রতিবাদ মিছিল করছে৷ সকাল থেকেই গণপরিবহণ ও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল ছিলো কম৷ চট্টগ্রামে দুপুর পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ ছিল৷

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পাঁচ ধরনের প্রভাবে কথা বলেন৷ তার মধ্যে রয়েছে:

১.পরিবহণ খাত৷ কারণ অধিকাংশ গণপরিবহণ ডিজেলচালিত৷
২.উৎপাদন, শিল্প ও পোশাক খাতে খরচ বাড়বে৷
৩. কৃষি উৎপাদনের খরচ বাড়বে৷
৪.পণ্য পরিবহণ খরচ বাড়বে৷
৫. সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বেড়ে যাবে৷

‘আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও দাম বেশি’
বাংলাদেশে পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন ও কেরোসিনের দামএকবারে এত বেশি আর কখনোই বাড়েনি৷ ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা করা হয়েছে৷পেট্রোলের দাম ৫১.৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা লিটার৷ অকটেনের দাম ৫১.৬৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা লিটার হয়েছে৷

‘‘কৃষি উৎপাদনের খরচ বাড়বে’’


অন্যদিকে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের ভবিষ্যৎ দাম ছিল ৯৪.১২ ডলার এবং ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম কমে এসেছে ৮৮.৫৪ ডলারে, যা গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার পর সর্বনিম্ন৷

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ম. তামিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যে হারে  জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে তাতে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে এখন বাংলাদেশে  জ্বালানি তেলের দাম বেশি৷''

তার মতে , সরকার জ্বালানি তেলের আমদানি খরচ বৃদ্ধির অজুহাত দিলেও বাস্তবে কমছে৷ ‘‘তারা বলছে ডিজেল এখন ১২২ টাকা লিটার পড়ছে ভ্যাট, ট্যাক্স মিলিয়ে৷ এটা যদি হয় তারা বাজারের চেয়ে উচ্চমূল্যে কিনছে৷ তবে দাম সমন্বয় হয় তিন মাস পরপর৷ এখন যে দাম ধরা হচ্ছে তা তিন মাস আগের৷আর এখনকার কম দামের তেল আসবে তিন মাস পরে৷কিন্তু তখন কি কমবে?'’

ঢাকায় ফিলিং স্টেশনে ভিড় রাত থেকেই
ঢাকায় ফিলিং স্টেশনে ভিড় রাত থেকেইছবি: Munir uz ZamanAFP

সরকারের ব্যাখ্যার যৌক্তিকতা

দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানো ও পাচার ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ তবে বিশেষজ্ঞরা এই তিনটি কারণের কোনোটিকেই যৌক্তিক মনে করছেন না৷

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘বিপিসিকে বাঁচানোর জন্য জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলা হলেও এটা যৌক্তিক নয়৷ কারণ বিপিসি তো অনেক লাভ করেছে৷ সেই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়ে গেছে৷ লাভের টাকা যদি বিপিসির কাছে থাকত তাহলে সেই টাকা দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারত৷ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না৷''

 উল্লেখ্য গত মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলার পর্যন্ত ওঠে৷ এখন সেই জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারের নিচে৷ বিপিসি ২০১৪-১৫ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৪৮ হাজার ১২২ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে৷

এই বিষয়ে ম. তামিম বলেন, ‘‘বিপিসি যখন ব্যবসা করে তার সুফল দেশের মানুষ পায় না৷ আর যখন লোকসান হয় তার বোঝা বইতে হয়৷ এখন সবকিছুর দাম বাড়বে৷ এমনকি বাড়ি ভাড়াও বাড়বে৷আমার বিবেচনায় এইভাবে নজিরবিহীনভাবে জ্বালানি  তেলের দাম বাড়ানোর ঠিক হয়নি৷ ''

‘‘আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বাংলাদেশে জ্বালানির দাম বেশি’’

তিনি বলেন, ‘‘কার্যত এই খাতে ভর্তুকি তুলে দেয়া হয়েছে৷ এখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ব্যবসা করবে৷ এটা ঘোষণা দিয়েই সরকার করতে পারত, যা ভারত করেছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো যখন  জ্বালানি তেলের দাম কমে তখন এখানে কমে না৷''

কারণ আইএমএম এর ঋণ?

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বাংলাদেশ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছে৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে৷ ঋণের অঙ্ক খোলাসা করা না হলেও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে সরকার ও আইএমএফ দুই পক্ষই৷

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন আন্তর্জাতিক সংস্থাটির ঋণ পেতেই সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আইএমএফসহ দাতা সংস্থার ঋণ পেতে এটা করা হচ্ছে৷ এর আগে সারের দাম বাড়ানো হয়েছে৷ এখন ভর্তুকি কমাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো৷ দুইদিন পর হয়তো আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে৷ কিন্তু আর্থিক ব্যবস্থাপনা সঠিক হলে এই দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না৷''

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন,  ‘‘সরকারকে এখন আইএমএফের ঋণ পেতেই হবে৷ তা না হলে খরচ মিটাতো পারবে না৷ তাই এখন তাদের শর্ত মেনে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে৷ কয়েকদিন আগে সারের দাম বাড়িয়েছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ আরো চাপে পড়ছে৷ এর প্রভাবে সব কিছুর দাম বাড়া শুরু হয়েছে৷এটা বাড়তেই থাকবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য