অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবিতে আন্দোলন
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮এতদিন ধরে রাজনীতিকরা যা করে উঠতে পারেননি, ফ্লোরিডার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা তা করে দেখাতে পারছে৷ ফ্লোরিডার স্কুলে বন্দুকধারীর হামলার এক সপ্তাহ পরও অ্যামেরিকার রাস্তায় লাগাতার অস্ত্রবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তারা৷ তাদের বক্তব্য, রাজনীতিকরা তাদের বক্তব্যে সাড়া না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ হবে না৷
মার্কিন মুলুকে বন্দুকধারীর হামলা নতুন কিছু নয়৷ প্রতিবছরই স্কুল-কলেজে এমন হামলার ঘটনা ঘটে৷ গত সপ্তাহে ফ্লোরিডায় যে ঘটনা ঘটেছে, তা তেমনই এক বিষয়৷ এর জেরে ১৭ জনের প্রাণ গিয়েছে৷ নিহতদের অধিকাংশই ছাত্র৷ সাধারণত এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের তরফ থেকে দু'টি কাজ করা হয়৷ এক, রাজনীতিকরা ঘটনার নিন্দা করেন এবং ছাত্ররা যাতে সুরক্ষিত থাকেন, সে বিষয়ে আইন তৈরির আশ্বাস দেন৷ দুই, ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ৷ অর্থাৎ, অস্ত্রের খোলা বাজার ঘটনার জন্য দায়ী নয়, দায়ী অভিযুক্তের মানসিক অস্থিতিশীলতা৷ প্রতিবারই ঘটনার পর সামান্য কিছু প্রতিবাদ হলেও সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সকলে তা ভুলে যান৷
কিন্তু এবারের পরিস্থিতি খানিক অন্যরকম৷ ফ্লোরিডায় যেদিন ঘটনাটি ঘটে, সেদিন বিকেল থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হতে থাকে এবং প্রতিবাদ শুরু হয়৷ একদিনের মধ্যে সেই প্রতিবাদ বড় আকার ধারণ করে৷ অ্যামেরিকার অন্যান্য অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরাও প্রতিবাদে শামিল হয়৷ যোগ দেয় বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন৷ তাদের প্রত্যেকেরই দাবি, সুরক্ষার অধিকার রয়েছে সমস্ত নাগরিকের৷ ফলে, অবিলম্বে অস্ত্রের খোলা বাজার বন্ধ করতে হবে৷
এদিকে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মার্কিন রাজনৈতিক দলগুলির যোগাযোগ আর গোপন নেই৷ নির্বাচনের সময় বিভিন্ন অস্ত্র উৎপাদনকারী সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে অর্থ সাহায্য করে বলেও অভিযোগ৷ ফলে কোনো রাজনৈতিক দলই সরাসরি অস্ত্র নিষিদ্ধের পক্ষে কথা বলে না৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও অস্ত্রের খোলা বাজারের পক্ষে সওয়াল করেছেন অতীতে৷ তিনি বিশ্বাস করেন, নিরাপত্তার জন্য নাগরিক অস্ত্র কিনতেই পারেন৷
কিন্তু ফ্লোরিডার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের সামনে খানিক মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্টও৷ সম্প্রতি তিনি একটি আইন কার্যকর হওয়ার জন্য সই করেছেন৷ সে আইনে বলা হয়েছে, অটোমেটিক অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম আর খোলা বাজারে পাওয়া যাবে না৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত গোটা বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা৷ নাগরিকদের দাবি, সমস্ত অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে৷ সেখানে কোনো বাছাই চলবে না৷ এখন দেখার, অদূর ভবিষ্যতে ছাত্রদের আন্দোলনের চাপে মার্কিন প্রশাসন আরো বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না৷
মিশায়েল ক্নিগে/এসজি