অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা সেল
২৭ ডিসেম্বর ২০২২এ বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে সেলটির কার্যক্রম শুরু করতে গত ৫ ডিসেম্বর অনুমোদন দিয়েছেন৷
বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “গবেষণার কাজটি আগ থেকেই করা হত একটি বিভাগের অধীনে৷ এখন একটি ডেডিকেটেড সেল অর্থপাচার ঠেকাতে গবেষণার কাজটি করবে৷ পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কেমন তা পর্যালোচনা করা হবে৷”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একজন অতিরিক্ত পরিচালকের নেতৃত্বে গবেষণা সেলটি পরিচালিত হবে৷
অর্থপাচার প্রতিরোধের দায়িত্ব বিএফআইইউ এর ওপর থাকলেও বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কী পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে, তার আনুষ্ঠানিক তথ্য সংস্থাটি প্রকাশ করে না৷ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যই দেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে৷
গত অর্থবছরে আমদানিতে উল্লম্ফন হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপে পড়ে বাংলাদেশ, যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে৷
গত অক্টোবের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ে বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেছিলেন, ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দর দেখিয়ে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে৷
কোন মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয়– এ প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস জানান, বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে পাচার হয় ‘সবচেয়ে বেশি'৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর একাধিকবার জানিয়েছেন, গত জুলাইয়ের আগে সম্পন্ন হওয়া আমদানি-রপ্তানির এলসি তথ্য বিশ্লেষণে পণ্যর দর বাড়ানো ও কমানোর বিষয়টি তিনিও দেখতে পেয়েছেন৷ তাদের ধারণা হয়েছে, ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দরে পণ্য আমদানি হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে৷
আবার কম দর দেখিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছ৷ বাকি অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে জানিয়ে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, গত জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এমন ১০০টি এলসি বন্ধ করার কথাও তিনি জানিয়েছেন৷
অর্থপাচার নিয়ে অর্থনীতিতে এমন আলোচনার মধ্যেই গবেষণা সেল গঠনের উদ্যোগটি এল৷
এ সেলের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে-
- বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার প্রতিরোধের বিদ্যমান ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা৷
- অর্থপাচার বন্ধে উপায় বের করতে গবেষণা করা৷
- পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিভিন্ন দেশের নেওয়া উদ্যোগ বিশ্লেষণ করা৷ এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য গ্রহণীয় পদক্ষেপের প্রস্তাব তৈরি৷
- বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও সফলতা পাওয়া ঘটনাগুলোর পর্যালোচনা৷
- পাচার হওয়া অর্থের তথ্য সন্ধানে যেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো৷
- অর্থপাচার প্রতিরোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বিদ্যমান আইনে সংশোধনের কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকলে তার সুপারিশ৷
উচ্চ আদালতের নির্দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তি করার কথা গত অক্টোবরে আদালতে হলফনামা আকারে জমা দিয়েছে বিএফআইইউ৷
এই দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং-চীন৷
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বেশির ভাগের গন্তব্য এসব দেশই বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে৷
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে জনবল বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনও নতুন জনবল বুঝে না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএফআইইউ'র শীর্ষ এক কর্মকর্তা৷
আইন অনুযায়ী, বিএফআইইউ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও জনবল, অবকাঠামো, অর্থসহ সামগ্রিক লজিস্টিক সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)