অভিবাসী সহায়তা
১৩ জানুয়ারি ২০১৪মিউনিখকেন্দ্রিক স্যুডডয়চে সাইটুং শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানায় যে, পত্রিকাটি ইউরোপীয় কমিশনের একটি নথি পেয়েছে, যেখানে অভিবাসী প্রশ্নে জার্মানির সমাজ কল্যাণ তহবিল নীতির সমালোচনা করা হয়েছে৷ বেকার বা আংশিক কাজে নিয়োজিত অভিবাসীদের ‘হার্টৎস ফিয়ার' বা সমাজ কল্যাণ তহবিল প্রাপ্তির অধিকার আছে কিনা – তা নিয়েই এই বিতর্ক৷
লুক্সেমবুর্গের অবস্থিত ‘ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসে' উত্থাপিত এক মামলার শুনানিকালে জার্মানির সমালোচনা করে কমিশন৷ রোমানিয়া থেকে আসা ২৪ বছর বয়সি এক নারীকে কল্যাণ তহবিল থেকে অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানায় ‘জব সেন্টার'৷ ফলে বিষয়টি এখন লুক্সেমবুর্গ পর্যন্ত গড়িয়েছে৷
স্যুডডয়চে সাইটুং সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে উদ্ধৃতি না করে জানিয়েছে, অভিবাসীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল্যাণ তহবিলের সুবিধা পাওয়ার অযোগ্য বিবেচনা করাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনের লঙ্ঘন মনে করে ব্রাসেলস৷ তবে জার্মানির শ্রম মন্ত্রণালয় এই প্রক্রিয়া পছন্দ করে, কেননা এতে আলাদা আলাদাভাবে আবেদন বিবেচনার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ এবং সময় বেঁচে যায়৷
জোটের মধ্যে দ্বিমত
রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া ২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়েছে৷ তবে চলতি বছরের শুরু থেকে সেদেশের নাগরিকদের জন্য ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশে চাকরি খোঁজার সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে৷ বিষয়টি জার্মান জোট সরকারের অংশীদারদের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক সৃষ্টি করেছে৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল সিডিইউ-র বাভেরিয়া অংশ সিএসইউ-র সঙ্গে এসপিডি-র বিরোধ এক্ষেত্রে অনেকটাই প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে৷ সিএসইউ ইউরোপের অভ্যন্তরে অভিবাসনের ক্ষেত্রে আরো কড়াকড়ি চায়, কেননা তারা মনে করে এভাবে ‘দারিদ্র অভিবাসন' বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে৷ অন্যদিকে, এসপিডি মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে কর্মীদের মুক্ত চলাচলের সুবিধার কারণে জার্মানি কার্যত লাভবান হচ্ছে৷ সিডিইউ এই বিতর্কে এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি কমিটিও গঠন করেছে সরকার৷
২০১০ সাল থেকে জার্মানিতে
রোমানিয়া থেকে আগত নারী, যাঁর মামলা লুক্সেমবুর্গের আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, তিনি একজন মা৷ তবে তিনি জার্মানিতে একেবারে নতুন নয়৷ ২০১০ সাল থেকে এ দেশে বসবাস করলেও এখন অবধি কোনো কাজ করেননি তিনি৷ স্যুডডয়চে সাইটুংয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নারী লাইপসিগ শহরে তাঁর বোনের সঙ্গে থাকতেন৷ তিনি নিজের সন্তানের জন্য শিশু তহবিল থেকে অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি স্থানীয় জব সেন্টারে বেকারত্বের ভাতাও দাবি করেন৷ কিন্তু জব সেন্টার তার সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে৷ বিষয়টি লাইপসিগ আদালতে নিয়ে যান আলোচিত নারী৷ তবে আদালত বিষয়টি ‘ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস'-এ পাঠিয়েছে৷
বলাবাহুল্য, জার্মান জোট সরকারের মধ্যে চলমান ‘দারিদ্র অভিবাসন' বিতর্কের সঙ্গে এই নারীর মামলা ঠিক সম্পৃক্ত নয়৷ তবে স্যুডডয়চে সাইটুং একজন অধ্যাপকের মন্তব্য প্রকাশ করেছে যিনি মনে করেন, এই মামলার রায় নারীর পক্ষে গেলে জার্মানিতে চাকুরির খোঁজে আগতরা ‘হার্টৎস ফিয়ার' প্রাপ্তির বিষয়ে আরো আশাবাদী হবেন৷
এদিকে, জার্মানির পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডি-র পরিচালিত এক জরিপে অংশ নেওয়াদের সত্তর শতাংশ মনে করেন, ‘‘জার্মানির অর্থনীতিতে যোগ্য বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে৷'' তবে পাশাপাশি তারা এটাও মনে করেন, ‘‘জার্মানিতে আগত ইউরোপীয় অভিবাসীদের মধ্যে যারা চাকরি খুঁজছেন না তাদের আবারো তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া উচিত৷''
পরিসংখ্যান বলছে, জার্মানিতে বসবাসরত বুলগেরীয় এবং রোমানীয় অভিবাসীদের মধ্যে অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের তুলনায় বেকারত্বের হার কম৷ শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সামাজিক কল্যাণ তহবিলের সুবিধাভোগীদের মধ্যে মাত্র ০ দশমিক চার শতাংশ রোমানীয় বা বুলগেরীয়৷
এআই/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)