1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিবাসন

আলেক্সান্ডার গ্যোবেল/আরবি১৭ মে ২০১৩

দারিদ্র, দুর্নীতি, ক্ষুধা, যুদ্ধ এসব কারণে আফ্রিকার অনেক মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন৷ বেশির ভাগই ইউরোপে যেতে আগ্রহী৷ অনেকে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য, যেমন ভালো একটা চাকরি, শিক্ষা এসবের আশায়ও বিদেশে পাড়ি জমান৷

https://p.dw.com/p/18ZUw
ছবি: Ärzte ohne Grenzen Marokko

শান্তালের বয়স ৩৫ বছর৷ পাঁচ বছর আগে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো থেকে পালিয়ে যান৷ রাজধানী কিনশাসায় বসবাস করাটা বিপজ্জনক ছিল তাঁর জন্য৷ শান্তাল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মবুতুর অনুসারী৷ এ কারণে কঙ্গোর বর্তমান প্রেসিডেন্ট কাবিলার লোকজন প্রকাশ্য রাজপথে হত্যা করতে দ্বিধা করে না৷ শান্তালের কথায়, ‘‘কঙ্গোতে মানুষ বাসই করতে পারে না৷ আমাদের খুব ভীত সন্ত্রস্ত৷ সেজন্য আমরা ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ি৷ আমরা যে খুব খুশি মনে দেশ ত্যাগ করি, তা নয়৷ কিন্তু কঙ্গোতে যুদ্ধ চলছে, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলে৷ অবস্থা ভয়ানক৷ আর্থিক অবস্থাও খুব খারাপ৷ অনেকের সামান্য একটা অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট কেনার মতো টাকা নেই৷ মরক্কো কঙ্গো থেকে অনেক দূরে৷ এটা বুঝি না, মানুষকে কেন নিজের দেশেই সাহায্য করা হয় না৷''

গন্তব্য সুদূরে

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শান্তাল পথে পথে রয়েছেন৷ কঙ্গো থেকে সেন্ট্রাল আফ্রিকা (মধ্য আফ্রিকা), চাড, নাইজার, আলজেরিয়া হয়ে মরক্কোয় পৌঁছেছেন তিনি৷ একবার ধর্ষণের শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে৷ নৌকাডুবির হাত থেকে উদ্ধার পান আরেকবার৷

শান্তাল সেই ঘটনার বর্ণনা দেন এভাবে: ‘‘আমরা ছয়জন ছিলাম৷ চারজন ছেলে, দুইজন মেয়ে৷ আমাদের পালানোর সহায়তাকারী দালাল একজন মরক্কান৷ কিন্তু যে নৌকা করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়, তা খুব শক্তপোক্ত ছিল না৷ ২০ মিনিট পর নৌকাটা উল্টে যায়৷ আমি সাঁতার জানিনা৷ কিন্তু কিছু একটা ধরে টিকে ছিলাম৷ তাই বেঁচে যাই৷ ছেলেরাও বেঁচে যায়৷ কিন্তু আমার সঙ্গের মেয়েটি ডুবে যায়৷ কোনো রেসকিউ ওয়েস্ট ছিল না নৌকায়৷''

সাগরে ভেসে যায় সার্টিফিকেট

শান্তাল কিনশাসায় সেক্রেটারি হিসাবে কাজ করতেন৷ হাইস্কুল পাশ৷ কিন্তু তাঁর সার্টিফিকেটগুলি সাগরে ভেসে যায়৷ এখন তিনি মরক্কোর এক পরিবারে ঘরবাড়ি মুছতে যান৷ আইনত কোনো কাজ করার অনুমতি নেই তাঁর৷ সপ্তাহে ৪৫ ইউরো দিয়ে কোনো রকমে চলতে হয় তাঁকে৷ অন্য দু'জন মেয়ের সঙ্গে একটি ঘরে বসবাস করেন তিনি৷ মাসের শেষে কিছুই হাতে থাকে না৷ কঙ্গোর আত্মীয়স্বজনকে যে আর্থিক সাহায্য করা যাচ্ছে না, তা শান্তালের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক৷ তাই তিনি আশা করেন, ভাগ্য ভালো থাকলে একটা ‘ভালো নৌকায়' জায়গা পাওয়া যেতে পারে৷ শান্তাল তাঁর স্বপ্নের কথা জানান, ‘‘আমার স্বপ্ন ইউরোপ৷ আমি সেখানে কাজ করবো, অর্থ উপার্জন করবো৷ আমার পরিবারকে গর্বিত করবো৷ ঈশ্বরের ইচ্ছা থাকলে একজন ভালো মানুষকে বিয়ে করতে পারব৷''

পরিবারের গর্ব

সেনেগালের লেখিকা ফাটোউ ডিয়োম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ছেলে-মেয়েরা দেশ ছাড়লে পরিবার পরিজনরা যে খুব গর্ববোধ করেন তা নয়, তাঁরা খুশি হন ছেলে বা মেয়ে ইউরোপে অর্থ উপার্জন করতে পারলে৷ এই টাকা তারা দেশে পাঠাতে পারেন, মা-বাবার জন্য একটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর সুযোগ করে দিতে পারেন৷ কোনো ছেলে বা মেয়ে যদি পরিবারকে সাহায্য করে, তাহলে তাকে আফ্রিকায় বেশ মর্যাদার চোখে দেখা হয়৷ তাদের একটা ভালো চাকরি থাকলে পরিবার বেশ গর্বিত হয়৷ অভিবাসন নয়, বরং অভিবাসনের সঙ্গে যে সাফল্য জড়িত, সেটাই এখানে মুখ্য বিষয়৷''

Illegale Einwanderer in Athen
দারিদ্র, দুর্নীতি, ক্ষুধা, যুদ্ধ এসব কারণে আফ্রিকার অনেক মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হনছবি: picture-alliance/dpa

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল শান্তালকে৷ পথের অভিজ্ঞতাও সুমধুর নয়৷ ডুবতে ডুবতে বেঁচে গিয়েছেন৷ কিন্তু পথই ডাকছে তাঁকে আবার৷ তিনি বলেন, ‘‘এই বছর আমি ইউরোপে যাব৷ ঈশ্বরের ইচ্ছা থাকলে৷ ঝুঁকি না নিলে কিছু জয়ও করা যায় না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য