কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহায়তায় কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর নিলো ইডি
৪ জানুয়ারি ২০২৪আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি কালীঘাটের কাকুরগলার স্বরের নমুনা নেয়ার জন্য বেশ কিছুদিন হলো চেষ্টা করছিল। কিন্তু সুজয়কৃষ্ণ রাজ্য সরকারের হাসপাতাল এসেসকেএঅমে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে তাকে বের করে নমুনা নেয়া ইডির পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, সার্জারি করে সুজয়কৃষ্ণের গলার স্বর বদল করে দেয়া হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্ট কড়া মনোভাব দেখায় এবং ইডি-কে দ্রুত কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে বলে। বলা হয়, সুজয়কে এআসআই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হবে। বুধবারও বিচারপতি অমৃতা সিনহার আদালতে রুদ্ধদ্বার শুনানি হয়েছিল। সেখানে ইডি-র যুগ্ম ডিরেক্টর ও ইএসআইয়ের মেডিক্যাল দলের প্রধানকে ডাকা হয়েছিল।
এর আগে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস এবং এই সংস্থার প্রধান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি সংক্রান্ত হিসাব আদালতে জমা দিয়েছে ইডি। সুজয় এই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসেই কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে ইডি জানিয়েছে, কণ্ঠস্বরের নমুনা নেয়া হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক হয়েছে ১০ জানুয়ারি।
কেন এই গলার স্বর পরীক্ষা?
সুজয়কৃষ্ণ বেআইনি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত। তাকে ১১ ঘণ্টা ধরে জেরা করার পর ৩০ নভেম্বর ইডি গ্রেপ্তার করে। ইডি-র তদন্তে উঠে এসেছে, সুজয়কৃষ্ণের নির্দেশে ফোন থেকে কিছু কল রেকর্ডিং মুছে দেন রাহুল বেরা। ইডির দাবি, ওই কল রেকর্ডিং তাদের কাছে আছে। সেখানে যিনি কথা বলেছেন, তিনি সুজয়কৃষ্ণ কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কণ্ঠস্বর পরীক্ষা খুবই জরুরি।
কিন্তু সুজয়কৃষ্ণ এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ইডি তার কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করতে পারছিল না।
বুধবার রাতে কী হলো?
বুধবার রাতে এসএসকেএমে গিয়ে দাঁড়ায় ইএসআইয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স। তার আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সেখানে মোতায়েন করা হয়। কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, শালমুড়ি দিয়ে হুইল চেয়ারে সুজয়কৃষ্ণকে আনা হচ্ছে।
তাকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় ইএসআই হাসপাতালে। প্রথমে তার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। এরপর তার কণ্ঠস্বরের নমুনা নেয়া হয়। কিছু লাইন বা কথা তাকে বারবার বলতে বলা হয়। ওই কথাগুলো টেলিফোন সংলাপে ছিল বলে ইডি সূত্র জানাচ্ছে।
আদালতের নির্দেশ
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, এসএসকেএমে কোন কোন প্রভাবশালী ভর্তি আছেন, তার তালিকা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে জানাতে হবে, আর কতদিন তাদের হাসপাতালে থাকতে হবে?
হাইকোর্টে এই মামলাকারীর আইনজীবী সুস্মিতা লাহা দত্ত বলেছেন, ''''কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে যারা গ্রেপ্তার হচ্ছে, তারা এসএসকেএমে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। এসএসকেএম তাদের সেফ জোন হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের চিকিৎসা, অন্যদের চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছে.।''
সুজয়কৃষ্ণকেই শিশুদের জন্য নির্ধারিত বেডে রাখা হয়েছে। সুস্মিতা বলেছেন, ''এরা কেউই জীবনদায়ী ব্যবস্থায় নেই। তারা ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন।'' প্রধান বিচারপতি বলেন, ''এই অভিযোগ সত্য হলে তা মারাত্মক ঘটনা।''
ইডি জানিয়েছে, তাদের হেফাজত থেকে জেলে যাওয়ার পরই অভিযুক্তরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন।
'ঠিক পদক্ষেপ'
প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''হাইকোর্ট একেবারে ঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর সুবিধা থাকলেই রাজনীতিবিদ বা অন্যরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান। একজন ব্যবয়াসী তো আট মাস হাসপাতালে ছিলেন।''
আশিসের বক্তব্য, ''প্রভাবশালীরা সুযোগ পেলেই এই কাজ করে যাবেন, এটা মেনে নেয়া যায় না। পশ্চিমবঙ্গে মন্ত্রী, রাজনীতিবিদরা গ্রেপ্তার হলেই এসএসকেএম হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন এটা ঘটনা। অন্য রাজ্যেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ''
জিএইচ/এসিবি (পিটিআই)