সাইস কোম্পানির আধিপত্য
৫ জানুয়ারি ২০১৬জার্মানির ইয়েনা শহরের স্কুল পড়ুয়াদের জন্য কার্ল সাইস কোম্পানি শহরের মাঝে এক তাঁবু গড়ে তুলেছে৷ ভেতরে ঢুকলে গবেষণার নানা সুযোগ পাওয়া যায়৷ এখানে তারা প্রজাপতির ডানা পরীক্ষা করতে পারে অথবা মাইক্রোস্কোপের নীচে সাপের চামড়া বিশ্লেষণ করতে পারে৷ একজন সঙ্গে একটা ক্রিস্টাল বা স্ফটিকখণ্ড নিয়ে এসেছে৷ স্কুল ছাত্র ফ্লোরিয়ান লাউকনার বলে, ‘‘আমি ক্রিস্টালের ধার দেখতে পাচ্ছি৷ কোণগুলি অনেকটা পিরামিডের মতো৷ অন্য পাথরও তার গায়ে লেগে রয়েছে৷ ব্যাপারটা নিয়ে আমার এত আগ্রহ, যে হয়তো আমি বড় হয়ে বিজ্ঞানী হবো৷ এভাবে খালি চোখে দেখা যায় না, এমন কত কত কী যে আবিষ্কার করা যায়!''
বিশ্বের প্রাচীনতম প্ল্যানেটোরিয়ামগুলির মধ্যে একটি এই শহরেই রয়েছে৷ সেখানেও শিশুদের বিজ্ঞান সম্পর্কে উৎসাহিত করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ আধুনিক প্ল্যানেটোরিয়াম নক্ষত্র, মহাকাশ ও প্রকৃতির গল্প শোনায়৷ শিশুদের নানা প্রতিক্রিয়া শোনা যায়৷ একজন বললো, তার খুব ভালো লাগে, কারণ এখানে সবকিছু বুঝিয়ে বলা হয়৷ সব কিছু ঘোরে বলে তাদের আর ঘোরার প্রয়োজন হয় না৷
কার্ল সাইস কারখানা যেন শহরের মধ্যে আরেকটা শহর৷ কারখানার নিজস্ব প্ল্যানেটোরিয়ামে প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হয়৷ এই যন্ত্রটি কলকাতায় পাঠানো হচ্ছে৷ ষাটের দশকে সেখানে সাইস কোম্পানির যে যন্ত্রটি পাঠানো হয়েছিল, সেটি বড় সেকেলে হয়ে গেছে৷ মানুষের চোখ প্রকৃতিকে হুবহু দেখতে পায়, ফিল্ম ক্যামেরা যা পারে না৷ সাইস কোম্পানির পদার্থবিদ ফল্কমার শরখট বলেন, ‘‘এই গোলক নক্ষত্রগুলি ফুটিয়ে তোলে৷ আলো বেরোনোর ফলে বড় লেন্সগুলি জ্বলজ্বল করছে৷ মোট ১২টি লেন্স রয়েছে৷ এই ১২টি প্রোজেক্টর দিয়ে আমরা গোটা রাতের আকাশ ফুটিয়ে তুলতে পারি৷''
পাশের হলেই প্ল্যানেটোরিয়ামের লেন্স তৈরি হয়৷ সব কাজ শেষ করে প্রতিদিন একটি করে প্রোজেক্টর প্রস্তুত হয়৷ দাম প্রায় ৫০,০০০ ইউরো৷ দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর পশ্চিম দিক থেকে আরও বেশি কম্পিউটার প্রযুক্তি এসেছিল৷ কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার ফ্রাংক সেমরাউ বলেন, ‘‘আমি মজা করে বলি, এমন যন্ত্রের উপযোগিতার প্রায় ৫০ শতাংশই আসে সফটওয়্যার থেকে৷ এই প্রযুক্তির সামনে আত্মসমর্পণ করতেই হয়৷
আর্কাইভের প্রধান কোম্পানির ইতিহাস জানেন৷ শীতল যুদ্ধের সময় সোভিয়েত জোটের মধ্যে সাইস ছিল সবচেয়ে বড় লেন্স কোম্পানি৷ তখন প্রায় ৭০,০০০ কর্মী এই সংস্থায় কাজ করতেন৷ এক নোবেলজয়ী পদার্থবিদের সঙ্গে সহযোগিতায় আধুনিক এই অপটিকাল মাইক্রোস্কোপ তৈরি হয়েছে৷ এই ক্ষেত্রে বেশ মুনাফা হয়৷ সাইস গোটা বিশ্বে প্রথম সারির কোম্পানি হিসেবে পরিচিত৷ কোম্পানির মার্কেটিং প্রধান ইয়খেন টাম বলেন, ‘‘মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র৷ প্রত্যেকটি স্নায়ুকোষের মধ্যে আদান-প্রদানের সূক্ষ্ম ছবিও পর্দায় আমরা দেখতে পাচ্ছি৷''
ভবিষ্যতের দক্ষ কর্মী খুঁজতে সাইস কোম্পানির এখনো তেমন অসুবিধা হচ্ছে না৷ গোটা অঞ্চলে অনেকেই এই কোম্পানিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতে আগ্রহী৷