অতিরিক্ত ছাত্র-ছাত্রীতে বিশ্ববিদ্যালয় বোঝাই
২১ নভেম্বর ২০১১তবে ছাত্র-ছাত্রী বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা৷ জার্মান সরকার জানিয়েছে, এ বছর গোটা জার্মানিতে অতিরিক্ত বাইশ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে৷ অ্যাপ্লায়েড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আগের চেয়ে বেশি ছাত্র-ছাত্রী দেখা যাচ্ছে৷ কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৪২ হাজারেরও বেশি৷ অথচ গত বছর পর্যন্তও তা ছিল পঁচিশ হাজারের কিছু বেশি৷
কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করার দায়িত্ব পালনকারী দপ্তর ‘আস্টা'৷ এই দপ্তর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়া হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করা হয়৷ এই দপ্তরের কর্মী ইয়োনাস টিলে৷ তিনি জানান,‘‘আমাদের কাছে থাকার জায়গার চেয়ে অনেক বেশি ছাত্র-ছাত্রী আসছে৷ ফোনের পর ফোন পাচ্ছি৷ সবচেয়ে বেশি আসছে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী – তাদের থাকার জায়গা নেই৷ এছাড়া রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নানা প্রশ্ন৷ এবং ক্লাস নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন৷''
যেসব কারণে এ বছর ছাত্র-ছাত্রী বেশি এসেছে তার কারণ হল এ বছর জার্মানিতে হাই স্কুল গিমনাজিউম শেষ করেছে এক সঙ্গে দুটি ব্যাচ৷ সাধারণত কিন্ডারগার্টেনের পর প্রাইমারি স্কুল এবং এরপর ১৩ বছর গিমনাজিউম৷ নতুন এক বিধির আওতায় ছাত্র-ছাত্রীরা ১৩ বছর শেষ না করে ১২ বছর পড়েই স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে এবং তারা পাশও করেছে৷ তাই এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা দেড়গুণ বেশি৷ এছাড়া এ বছর থেকেই জার্মানিতে তরুণদের সেনাবহিনীতে আট মাসের বাধ্যতামূলক সার্ভিসও তুলে নেয়া হয়েছে৷ যার ফলে স্কুল শেষ করে সেনাবাহিনী নয় সরাসরি এরা ভর্তি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ ২০১১ এবং ২০১২ সালের শীতকালীন সেমেস্টারে তাই পাঁচ লক্ষ বেশি ছাত্র-ছাত্রী শুধু সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই ভর্তি হয়েছে৷
মরুভূমিতে এক ফোঁটা জল – কাজ হচ্ছে না
কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে আস্টা অফিস ছাড়াও রয়েছে একটি স্টুডেন্ট সার্ভিস সেন্টার৷ এর পাশাপাশিই তৈরি করা হচ্ছে নতুন আরেকটি স্টুডেন্ট সেক্রেটারিয়েট৷ ২০১৩ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে৷ ইয়োনাস টিলে মনে করেন ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্যে আরো দপ্তরের প্রয়োজন৷ তিনটি দপ্তর যথেষ্ট নয়৷ তিনি আরো বললেন,‘‘এই অফিস মরুভূমিতে এক ফোঁটা জলের মত কাজ করবে – অর্থাৎ কিছুই হবে না এই অল্প সংখ্যক দপ্তর দিয়ে৷ আমাদের প্রয়োজন বিভিন্ন সেমিনারের জন্য আরো অনেক বেশি রুম, ল্যাব৷ ক্লাস এবং লেকচারের জন্য আরো অনেক বেশি জায়গা৷'
সমস্যার এখানেই শেষ নয়৷ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু সেই তুলনায় অধ্যাপকের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় চারশো লোক নিয়োগ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে অধ্যাপক থেকে শুরু করে সেক্রেটারিও রয়েছেন৷ কথাগুলো জানান কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র প্যাট্রিক হনেকার৷ তার ভাষ্য,‘‘শুধু ছাত্র-ছাত্রীদেরই বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে আমরা ৬৯ জনকে নিয়োগ করেছি৷ এর মধ্যে বিভিন্ন আইনগত বিষয় এবং বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে এরা সাহায্য করবে ছাত্র-ছাত্রীদের৷ তবে প্রতি একশো ছাত্র-ছাত্রীর জন্য রয়েছে মাত্র একজন পরামর্শদাতা৷ আগে অবস্থা আরো খারাপ ছিল৷ আগে প্রতি দেড়শো ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ছিল মাত্র একজন পরামর্শদাতা৷''
যথেষ্ট অধ্যাপক নেই, নেই সহকর্মীও
এত সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য প্রয়োজন আরো অনেক বেশি অধ্যাপকের৷ এর পাশাপাশি প্রয়োজন অন্যান্য সহকর্মীদের যারা শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য করে থাকে৷ তবে প্যাট্রিক হনেকারের দৃষ্টি আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিং ভবন তৈরির দিকে৷ প্রথমে প্রয়োজন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ক্লাসরুমের৷ কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই এসব ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ হনেকার আরো জনালেন,‘‘কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে চল্লিশ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর জায়গা হবে, তারা ক্লাস করতে পারবে৷ এর বেশি নয়৷ অথচ আমাদের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা এর চেয়ে বেশি৷ আমরা ছোট বিশ্ববিদ্যালয়৷ এত বেশি ছাত্র-ছাত্রীর দিকে নজর রাখতে হলে প্রয়োজন অন্তত আরো একশ'জন অধ্যাপকের৷ কিন্তু এত অর্থ আমাদের হাতে এই মুহূর্তে নেই৷ রয়েছে বাজেট সমস্যা৷''
তবে এত বেশি ছাত্র-ছাত্রীর জন্য থাকার সমস্যা প্রবল৷ থাকার জায়গা অনেক ছাত্র-ছাত্রীরই নেই৷ এর দায়িত্বে রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টেনভ্যার্ক৷ ডয়চে স্টুডেন্টেনভ্যার্কের সাধারণ সম্পাদক আখিম মায়ার৷ তারা কাজ করছে ৫৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টেনভ্যার্কের সঙ্গে৷ আখিম মায়ার বললেন,‘‘ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার জায়গার প্রয়োজন৷ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি৷ এর পাশাপাশি আমরা সাধারণ মানুষদের সঙ্গেও কথা বলছি যাদের বড় বড় বাড়ি আছে৷ তাদেরও এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি৷ তবে তার পরেও সমস্যা থেকেই যাচ্ছে৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক