জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মতত্ত্বের শিক্ষা
৭ নভেম্বর ২০১১এছাড়া আরো তিনটি ইসলাম ধর্মতত্ত্ব শিক্ষা কেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে ২০১২ সালে৷ তবে এ বছরের অক্টোবর মাসেই ইসলাম ধর্মতত্ত্ব শিক্ষা কেন্দ্র শুরু হয়েছে বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ ২০১২ সালে অসনাব্রুক-মুন্সটার বিশ্ববিদ্যালয়, এরলাঙ্গেন-ন্যুর্নব্যার্গ, ফ্রাঙ্কফুর্ট-গিসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রগুলোতেও ইসলাম ধর্ম শিক্ষা চালু হয়ে যাবে৷ আগামী পাঁচ বছর এই প্রকল্প প্রাথমিকভাবে চলবে৷ বাজেট ধার্য করা হয়েছে ২০ মিলিয়ন ইউরো৷
জার্মানিতে সবমিলে প্রায় সাত লক্ষ মুসলমান স্কুল ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে৷ আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে৷ এবং এদের শিক্ষা দেয়ার জন্য জার্মানিতে দ্রুত ভিত্তিতে এই মুহূর্তে প্রয়োজন অন্তত দুই হাজার শিক্ষক যাদের ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বেশ ভাল জ্ঞান রয়েছে৷ এছাড়াও প্রয়োজন ইমামের৷ এমন একজন ইমাম যার জার্মান ভাষায় দখল রয়েছে৷ প্রতি বছর তুরস্ক থেকে প্রায় একশো জন ইমাম আনা হয় জার্মানিতে৷ মূলত তুর্কিরা যায়, এরকম মসজিদে এরা চার-পাঁচ বছর পর্যন্ত ইমামতি করেন৷ এরপর ফিরে যান নিজ দেশে৷
শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার মাপকাঠিটা আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে - রেক্টর
ট্যুবিঙ্গেনের শীতকালীন সেমেস্টারে ২৪ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে ইসলাম ধর্মতত্ত্ব শিক্ষার কোর্সে৷ এর অধীনে ইমাম হওয়ার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্যও শেখানো হবে৷ সেমেস্টার সবমিলে আটটি অর্থাৎ চার বছরের কোর্স৷ কোর্সে ইসলাম ধর্ম ছাড়াও সংস্কৃতি, সমাজ বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিকও পড়ানো হবে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর ব্যার্ন্ড এঙ্গলার জানান,‘‘আমরা যদি ইসলাম ধর্মতত্ত্ব শিক্ষার এমন একটি কেন্দ্র হতে চাই যে কিনা আন্তর্জাতিক মানে নিজেকে তুলে ধরতে পারবে, জ্ঞানচর্চার দিক থেকে যাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে, যে কেন্দ্র নতুন কিছু দিতে আগ্রহী হবে, তাহলে গড়ে তোলার এই পর্যায়ে আমাদের খুবই সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে৷ আমাদের এটা স্পষ্ট করে তুলতে হবে যে শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার মাপকাঠিটা আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে৷''
চারজন অধ্যাপক নিয়োগ করা হয়েছে এই কোর্সটি পরিচালনা করার জন্য৷ এছাড়া অন্য দেশ থেকে গেস্ট লেকচারারও মাঝে মাঝে আনা হবে৷ ধারণা করা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত হয়তো ছয়জন অধ্যাপক নিয়োজিত হবেন কোর্সের জন্য৷
ইসলাম বিশেষজ্ঞ ওমর হামদান
৪৭ বছর বয়স্ক ওমর হামদান ইসলাম ধর্মতত্ত্ব নিয়ে বার্লিনের ফ্রি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন৷ তার বিষয় ছিল ইহুদি ধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম এবং ইসলাম ধর্মের বিজ্ঞান ও ইতিহাস৷ জেরুসালেমে তিনি পড়াশোনা করেছেন ইসলাম ধর্ম, আরবি ভাষা এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে৷ ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পিএইচডি করেছেন৷ ইসলাম ধর্মতত্ত্বের নানা দিক নিয়ে তিনি লিখেছেন গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন, প্রকাশ করেছেন সমীক্ষা৷ কোরআন শরীফ নিয়ে কে কী বলেছেন, কীভাবে তার ব্যাখ্যা করেছেন সেসব হামদানের গবেষণার বিষয়৷ ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ইসলাম কেন্দ্রে নিজের কাজ সম্পর্কে খুবই খুশি হামদান৷ হামদান বললেন,‘‘আমি নিজে ইসলাম ধর্মতত্ত্বের একটি কেন্দ্র পরিচালনা করব, আমার আরব্ধ কাজ আমি করব, এ ছিল আমার স্বপ্ন৷ আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে পরিণত করার এই হল সময়৷''
ওমর হামদান ইসারলেয়েল নাগরিক কিন্তু একজন সুন্নি মুসলমান৷ একটি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে প্রথম এসেছিলেন জার্মানিতে৷ তখনই জার্মান ভাষা শেখেন৷ বর্তমনে তিনি বিবাহিত এবং তিন কন্যা সন্তানের জনক৷ তবে তিনি বলেন, তার বইগুলোও তাদের কাছে সন্তানের মতই প্রিয়৷ তার নিজস্ব সংগ্রহে রয়েছে প্রায় তিন হাজার বই৷ তাঁর সংগ্রহের একটি বড় অংশ তিনি ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নতুন ইসলাম ধর্মতত্ত্ব কেন্দ্রকে দান করতে চান৷ কারণ সেখানে বইগুলো অনেক বেশি কাজে লাগবে৷ তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে বৈজ্ঞানিক ও অ্যাকাডেমিক ভিতের ওপর ইসলাম ধর্মতত্ত্বের শিক্ষা দেয়ার মোক্ষম সময় এবং সুযোগ এটাই৷
ইসলাম ধর্মতত্ত্বের এই কেন্দ্রে তরুণ মুসলমানরা তাদের ধর্ম, আরবি ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে আরো ভালভাবে পরিচিত হতে পারবে, এ বিষয়ে ওমর হামদান একেবারে নিশ্চিত৷
আদনান ফেতিচের জন্ম ১৯৯০ সালে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনায়৷ গত ১৪ বছর ধরে সে জার্মানিতে বসবাস করছে৷ সে ভর্তি হয়েছে ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইসলাম ধর্মতত্ত্বের কোর্সে৷ ফেতিচের ভাষায়,‘‘এই প্রথমবারের মত সুযোগ এসেছে সত্যিকার অর্থে, ইসলাম শিক্ষা দেয়ার উপযুক্ত নতুন এক দল তৈরি করার৷ যারা কিনা বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও সমিতিতে থাকা মুসলমানদের সাহায্য সমর্থন যোগাতে পারবেন - ইসলাম ধর্মের এক উন্নততর ছবি সরবরাহের পথ প্রশস্ত করতে পারবেন৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক