1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

২২ জেলায় বিজিবি, কী ঘটেছিল কুমিল্লায়

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ অক্টোবর ২০২১

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপ, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর এবং আগুনের পর দেশের ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে কমপক্ষে ১০ জেলায়। সেসব জেলা থেকে মন্দির, মণ্ডপ ও প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।

https://p.dw.com/p/41gZG
Bangladesch Angriffe auf Hindu-Tempel während Durga-Puja-Feierlichkeit
ছবি: bdnews24.com

চাদঁপুরের হাজীগঞ্জে চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

এদিকে কুমিল্লার ঘটনায় এপর্যন্ত ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে। কুমিল্লা কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল আজিম জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ফয়েজ উদ্দিন আছেন যিনি ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে দিয়েছেন।

কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পারে পুজা মণ্ডপ থেকে বুধবার সকালে পবিত্র কোরআন উদ্ধার করেন কোতোয়ালী থানার ওসি। তিনি জানান,"আমি কোরআন উদ্ধারের সময় ভিডিও করা হয়। অনেক লোকের মধ্যে কেউ ভিডিও করলে আমি থামাবো কীভাবে। তবে যে ব্যক্তি ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়েছেন তাকে আটক করেছি।” বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

ওসি জানান, "এখনো তদন্ত পর্যায়ে তাই কোরআন রাখার ঘটনায় কারা জড়িত তা এখন প্রকাশ করা সম্ভব নয়।” এদিকে মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা না থাকলেও আশপাশে সিসি ক্যামেরা ছিলো বলে জানান চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন,"আমরা আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। জড়িতদের  চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”

নির্মল পাল

কুমিল্লা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক  নির্মল পাল কোরান উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, মণ্ডপটি রাত ১২ টায় বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ৬টা পর্যন্ত সিকিউরিটি গার্ড ছিল। তারপর তারা চলে যায়। সকাল আটটার দিকে পুরোহিত আসেন। এসে দেখেন এই ঘটনা।

তিনি জানান, উদ্ধারের পর নানা ভাবে নানা ভাষ্যে খবর ছড়িয়ে পরে । এরপর ওই মণ্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা  হয়। ছাতিপাড়া চন্দ্রমনি রক্ষা কালী মন্দিরেও হামলা করে প্রতিমা ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়। এর বাইরে আরো ১৫টি মন্দির ও মণ্ডপের পূজার গেটে আগুন দেয়া হয় , ভাঙচুর করা হয়। এই কারণে ওই দিন বেশ কিছু মন্দিরে পূজা বন্ধ হয়ে যায়।

কুমিল্লার শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আমীর আলি চৌধুরি জানান,"যারাই এই কাজটি করেছে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করেছে। যারা করেছে তারা মণ্ডপের ভিতরে নয়, গেটে হনুমানের মুর্তির কাছে কোরআন রেখেছে। আবার সাথে সাথে পুলিশকে ফোন দিল কারা? তারা কীভাবে খবর পেয়েই শত শত বাঁশ নিয়ে ভাঙচুর করতে নেমে গেল? আমার মনে হয় এটা পরিকল্পিত। এসব বের হলেই অপরাধীকে চিহ্নিত করা যাবে।”

তিনি বলেন,"কুমিল্লা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর। আমার মনে হয় যারা ধর্মীয় উন্মদনা সৃষ্টি করে সুবিধা নিতে চায় তারাই এরসঙ্গে জড়িত।”

এদিকে চাঁদপুরে হাজীগঞ্জে  বুধবার রাতে একটি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের সময় পুলিশ বাধা দেয়। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি চার জন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়ছে।

আসাদুজ্জামান খান কামাল

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি ডয়চে ভেলেকে জানান, কুমিল্লার পর চাঁদপুর, গাজীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে মন্দির ও মণ্ডপে হামলা এবং প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পেয়েছি।

এর বাইরেও মৌলভীবাজার, নোয়াখালী, রাজশাহীতে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। তিনি জানান," যেখানে হামলা ভাঙচুর হয়েছে সেখানে আমরা পূজা  বন্ধ না করে ঘটপূজা করতে বলেছি।”

কুমিল্লায় মন্দিরে কোরআন পাওয়ার ঘটনায় যারা দায়ী তাদের তিনি চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে মন্দির, পূজামণ্ডপএবং প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদেরও শাস্তি দাবি করেন তিনি। তার কথা,"একটি দুষ্টচক্র সম্প্রীতির অসমাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছে। কিন্তু তারা তা পারবে না।”

এদিকে বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুর্গা পূজার নিরাপত্তায় কুমিল্লা,­ নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জসহ ২২টি জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়োজনে ঢাকাসহ অন্য এলাকায়ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকের পর বলেন, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে চারজন নিষ্পাপ মানুষ মারা গেল। সিলেটের জকিগঞ্জ, চট্টগ্রামের বাঁশখালি, পটিয়া বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা একের পর এক ঘটছে। আমরা মনে করি এটা কোনো ষড়যন্ত্রকারীর উদ্দেশ্যমূলক কর্ম। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের অবশ্যই আমরা খুঁজে বের করব। কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি।”

তিনি আরো বলেন,"এই ধরনের ইস্যুকে  কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের চেষ্টাও আমরা দেখছি।”

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টার সাথে যারা জড়িত তারা যে ধর্মেরই হোক তাদের রেহাই দেয়া হবে না।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য