১০০ গার্মেন্টস বন্ধ!
১২ নভেম্বর ২০১৩বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ২০১০ সালে সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৩,০০০ টাকা৷ এরপর গত নভেম্বর মাসে তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুন এবং এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসে প্রায় ১,৩০০ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিরপত্তা এবং মজুরি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে৷ শেষ পর্যন্ত সরকার তিন মাস আগে পোশাক শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করে৷ বোর্ড গত সপ্তাহে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫,৩০০ টাকা নির্ধারণ করে৷ এই মজুরি মালিক-শ্রমিক কেউই প্রথমে মেনে নেননি৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলতি সপ্তাহে মালিকরা এই মজুরি মেনে নিলেও, শ্রমিকরা অনড় রয়েছেন৷ তাঁদের দাবি, সর্বনিম্ন মজুরি হতে হবে ৮,১১৪ টাকা৷
এই দাবিতেই তাঁরা সোমবার সাভার এবং আশুলিয়া এলাকায় পোশাক কারখানার কাজ বন্ধ করে ভাঙচুর চালায়৷ ভাঙচুরের সময় ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ এই পরিস্থিতিতে মালিকরা ঐ এলাকার ১০০টি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত একটি পোশাক কারখানা আলিফ ভিলেজে-র মালিক আলতাফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, তাঁরা কারখানার নিরাপত্তা না পেলে উত্পাদন অব্যাহত রাখতে পারবেন না৷ তিনি বলেন, নতুন ঘোষিত মজুরিতে শ্রমিকদের ৭৭ ভাগ বেতন বেড়েছে৷ তারপরও শ্রমিকরা তুষ্ট না হলে তাঁদের আর করার কিছু নেই৷ কারণ ক্রেতারা একটি নির্দিষ্ট মূল্যে তাঁদের কাছ থেকে পোশাক কেনেন৷ এর বেশি মজুরি দিলে তাঁদের পক্ষে ব্যবসা চালানো সম্ভব হবে না৷
অন্যদিকে আন্দোলনকারী শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার আশুলিয়া অঞ্চলের নেতা মো. ইব্রাহিম ডয়চে ভেলেকে জানান, শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করতে হবে বর্তমান বাজার দর এবং জীবনযাত্রার ব্যয় হিসাব করে৷ তাঁর কথা, মালিকরা অধিক মুনাফার লোভে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে চান না৷ তিনি বলেন, সিপিডি এবং নিরপেক্ষ গবেষকরাও মনে করেন যে, ন্যূনতম মজুরি ৮,০০০ টাকা হওয়া উচিত৷
অপরদিকে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সহ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, একটি চক্র বাংলাদেশের পোশাক খাতকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে৷ তারাই পোশাক কারখানায় ভাঙচুর এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে৷ তিনি বলেন, নতুন মজুরি দিতেই মালিকদের হিমশিম খেতে হবে৷ তবে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, নতুন মজুরিতে শ্রমিকদের জীবনধারণ সম্ভব নয়৷ মালিকরা ভালো উত্পাদন চাইলে কমপক্ষে ৮,০০০ টাকা বেতন দিতে হবে৷
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ৷ রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ ভাগই আসে এই খাত থেকে৷ কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে এই খাত চাপের মুখে রয়েছে৷