এভারেস্ট জয়
২৯ মে ২০১৩মাথার উপর সুউচ্চ আকাশ৷ নয়তো পৃথিবীটা নীচে পড়ে৷ এভারেস্ট শৃঙ্গের উচ্চতা তখন ছিল ৮,৮৫০ মিটার৷ হিলারি আর তেনজিং-এর আগেও বহু পর্বতারোহী এভারেস্টে ওঠার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সফল হতে পারেননি৷ তেনজিং মারা যান ১৯৮৬ সালে৷ হিলারি ২০০৮ সাল অবধি বেঁচে ছিলেন৷
হিলারি ও তেনজিং-এর সেই ঐতিহাসিক অভিযানের পরের তিন দশকে বহু পর্বতারোহী বিভিন্ন পথ ধরে এভারেস্টে উঠেছেন৷ তার পরের ২৫ বছরে এভারেস্ট যাত্রা যেন পর্যটকদের বাঁধা রুটে পর্যবসিত হয়েছে৷ আজকাল তো ক্যাটালগ থেকেই এভারেস্ট যাত্রা বুক করা যায়৷ শৃঙ্গের চূড়া অবধি খুঁটি আর দড়ি বাঁধা আছে৷
শেরপাদের সাহায্য নিয়ে এ বছরের বসন্তে পাঁচশোর বেশি মানুষ এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন৷ তাদের মধ্যে ছিলেন এক ৮০ বছরের জাপানি বৃদ্ধ৷ আজকাল প্রায় সব এভারেস্ট আরোহী অক্সিজেনের মুখোশ পরে থাকেন, কেউ কেউ তো ৫,৩০০ মিটার উচ্চতায় আরোহণ শুরু হওয়ার সময় থেকেই৷
এমনকি নিজেদের অক্সিজেনের সিলিন্ডারগুলো নিজেরা বহন করতেও কষ্ট হয় এদের৷ তাই কিছু কিছু হবু ‘এভারেস্ট বিজয়ী' অক্সিজেনের সিলিন্ডারগুলি সামনের শেরপার কাঁধে রুকস্যাকে ঝুলিয়ে নিজেরা টিউব দিয়ে অক্সিজেন শুঁকতে শুঁকতে চলেন৷ রাইনহোল্ড মেসনার কিংবা রাল্ফ ডুইমোভিটস-এর মতো ধ্রুপদী পর্বতারোহীদের কাছে এটা ‘ডোপিং' ছাড়া আর কিছু নয়৷
যে ক'টা দিন এভারেস্টে চড়া যায়, সে ক'দিন পিঁপড়ের মতো সারি দিয়ে পর্বতারোহীদের বাঁধা পথ ধরে উপরে উঠতে দেখা যায়৷ এভারেস্টে ওঠার মানে এককালে ছিল, বিশ্বের গম্ভীরতম গিরিশৃঙ্গগুলির উদাসীন নির্জনতায় সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া৷ আজ অনেক নামী-দামী পর্বতারোহীরা তাদের নির্ঘণ্ট থেকে এভারেস্টকে বাদ দেওয়ার কথাই ভাবছেন, অন্তত সেখানে প্রত্যাবর্তন করার তাদের কোনো ইচ্ছা নেই৷
এভারেস্টের উচ্চতা একই আছে৷ পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ শুধু তার আভিজাত্য, তার একাকীত্ব, তার রোমাঞ্চ হারিয়েছে৷