হতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, যেতে হলো জেলে
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার উত্তরসূরি হিসেবে কে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসবেন? তাই নিয়ে শশিকলা নটরাজন বনাম বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী পনিরসেলভমের মধ্যে তীব্র লড়াই৷ গত সপ্তাহ খানেক ধরে নানা নাটকীয় পরিস্থিতির উদ্ভব৷ কিন্তু গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শশিকলার মুখ্যমন্ত্রিত্বের স্বপ্ন তো বটেই, তাঁর রাজনৈতিক ভাগ্যও এখন বিশ বাঁও জলে৷ দুর্নীতি মামলায় তাঁর চার বছরের জেল এবং ১০ কোটি টাকা জরিমানা হয়৷ অবশ্য চার বছরের মধ্যে আগেই ছয়মাস জেল খেটেছেন জয়ললিতার সঙ্গে শশিকলাও৷ জেল খাটার পর আইন অনুসারে তিনি ১০ বছর পর্যন্ত ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না৷ রায় শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি৷ আত্মসমর্পণের জন্য সময় চেয়েছিলেন শশিকলা, কিন্তু আদালত তা মঞ্জুর করেননি৷ তাঁকে কর্নাটকের ব্যাঙ্গালুরু জেলে নিয়ে যাওয়া হয়৷
উল্লেখ্য, প্রায় ২১ বছর আগে নিম্ন আদালতে জয়ললিতা, শশিকলা এবং অন্য আরও কয়েকজন আত্মীয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল৷ কিন্তু কর্নাটক হাইকোর্টে আপিল করলে সেই রায় খারিজ হয়ে যায়৷ তাঁরা বেকসুর খালাস পেয়ে যান৷ তারপর মামলা যায় সর্বোচ্চ আদালতে৷ কোটি কোটি টাকার হিসেব বহির্ভূত আয় মামলার রায়ে শীর্ষ আদালত মন্তব্য করেছেন, ‘‘রাজনীতিকদের অর্থলিপ্সার এক জঘন্য দৃষ্টান্ত৷ জয়ললিতাও সমান দোষী৷ কিন্তু তিনি প্রয়াত, কাজেই সব ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷'' এই রায় সম্পর্কে প্রবীণ আইনজীবী সোলি সোরাবজী বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের ব্যক্তি পরিচয় নয়, সাক্ষ্যপ্রমাণই গ্রাহ্য৷ এতে আরেকবার প্রমাণ হলো, দেশের বিচার ব্যবস্থা কত নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন৷''
ওজনদার রাজনীতিক নেতাদের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় শাস্তি হবার নজীর বিরল নয়৷ বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব স্বয়ং তার দৃষ্টান্ত৷ ২০১৩ সালে পশু খাদ্য কেলেঙ্কারিতে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে পাঁচ বছর জেল খাটতে হয়৷ জরিমানা দিতে হয় আড়াই লক্ষ টাকা৷ বলা বাহুল্য, তিনি পরবর্তি ছয় বছর ভোটে দাঁড়াতে পারেননি৷ প্রমাণিত হয় যে, লালু প্রসাদ পশুখাদ্যের খরচে ভুয়া বিল দিয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা তুলেছিলেন সরকারি ট্রেজারি থেকে৷ মামলা শুরু হয় ৯০-এর দশকের প্রথমদিকে৷ মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন ৯৭ সালে৷
দীর্ঘদিন মামলা চলে আইনি জটিলতায়৷ প্রথমে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর বিশেষ আদালতে৷ সেখান থেকে হাইকোর্টে, তারপর সুপ্রিম কোর্টে আবার ফেরত আসে সিবিআই-এর বিশেষ আদালতে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত পার পাননি লালু প্রসাদ৷ দোষী সাব্যস্ত হবার পর তাঁকে সাংসদ পদে ইস্তফা দিতে হয় এবং জেলে যেতে হয়৷ আরো অনেক নজীর আছে৷ হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী চৌথালা সরকারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তিন বছর ধরে জেলে৷ মনমোহন সিং সরকারের আমলে টু-জি, কয়লা কেলেঙ্কারিতে অনেক মন্ত্রীকে জেলে যেতে হয়, পরে জামিনে ছাড়া পান. কিন্তু মামলা চলছে৷
সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার সঙ্গে সঙ্গে শশিকলা মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য তাঁর একান্ত বিশ্বাসভাজন ই. কে পালানিস্বামীকে এআইএডিএমকে বিধায়ক দলের প্রধান করে দেন এবং বিরুদ্ধ শিবিরের পনিরসেলভামকে বহিষ্কার করেন দল থেকে৷ তাতে সরকার গঠনে কি ইতরবিশেষ হবে ? জানা গেছে, পালানিস্বামী ইতিমধ্যেই ১৩৪ জন বিধায়কের সমর্থন সম্বলিত চিঠি তুলে দেন রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাও-এর হাতে৷
আদালতের রায় বের হবার আগে শশিকলার দাবি মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক ছিলেন তাঁর দিকে৷ তামিলনাড়ু বিধানসভার ২৩৪ জন বিধায়কের মধ্যে এআইএডিএম বিধায়ক সংখ্যা ১৩৪৷ তার মধ্যে ১২৯ জন শশিকলা শিবিরের, যাঁদের তিনি আটকে রেখেছিলেন এক রিসর্টে দলত্যাগ রোধে৷ দলীয় অন্তর্দ্বন্দে পনিরসেলভামের পাল্লা ক্রমশই ভারি হচ্ছিল৷ শশিকলা মনোনীত মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রক্সি প্রার্থী পালানিস্বামী ১৩৪ জনের সই করা চিঠি রাজ্যপালকে দিয়ে আসার পর অনেকে মনে করছেন পনিরের পালের হাওয়া বুঝি কেড়ে নিলেন তিনি৷
এখন সবার দৃষ্টি রাজ্যে স্থিতিশীল সরকার গঠনে রাজ্যপালের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে৷ কিভাবে তিনি যাচাই করবেন প্রকৃতপক্ষে কোন শিবিরের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কতটা৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থায় বিধানসভার এক দিনের জরুরি অধিবেশন ডেকে দুই শিবিরকে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলতে পারেন রাজ্যপাল৷