‘স্মৃতিভ্রষ্ট রোগী’
২৬ মে ২০১২আপনার বাড়িতে বৃদ্ধ দাদি বা নানা বা বাবা-মায়ের মধ্যে এমন কেউ কি আছেন – যিনি প্রায় সময়ই একটু আগের কথাটা ভুলে যান? এমনকি মাঝে মধ্যে ভুলে যান চেনা মানুষকেও৷ মনে রাখতে না পারা সে মানুষটিকে হয়তো সবাই ‘ভুলোমনা' বলেই জানেন৷ আর ধরে নেন, বয়স হলে বুঝি এমনই হয়৷
বয়স্ক মানুষেরা এই যে সব কিছু ভুলে যান – এটিকে অসুখ হিসেবে এখনো ভাবাই হয় না বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে৷ অথচ, ভুলে যাওয়ার এ ঘটনাটি আসলে একটি অসুখ৷ বয়স ষাট-পঁয়ষট্টি বা সত্তর হয়ে এলে মস্তিষ্কে দেখা দেয় একধরণের অসুস্থতা৷ এ রোগকে ডাক্তারি ভাষায় বলে ‘ডিমেনশিয়া'৷ বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে ‘স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া রোগ'৷
এ রোগের লক্ষণ হলো – স্মৃতি হারিয়ে যাওয়া, আবেগ প্রকাশে ভারসাম্যহীনতা, কিছু বুঝতে সমস্যা হওয়া, হিসেব-নিকেশ করতে গুলিয়ে ফেলা ইত্যাদি৷ তবে, এই রোগের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ হচ্ছে ‘ভুলে যাওয়া'৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, সারা বিশ্বেই স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া রোগীর সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে৷ আগামী চার দশকে এই রোগীর সংখ্যা আরো ৭০ ভাগ বাড়বে বলেও সতর্কতা বাণী দেয়া হয়েছে৷
বর্তমানে প্রতি চার সেকেন্ডে একজন করে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে৷ গত দশ বছর আগে যেটি ছিল প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি এক সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আক্রান্ত হবে এই রোগে৷ আর নতুন করে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের ৭০ ভাগই হবে এশিয়া সহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মানুষ৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চিকিৎসা সেবা ততোটা উন্নত নয়৷ তাই, এ রোগকে মোকাবিলার প্রস্তুতি সে দেশগুলোতে অপর্যাপ্ত৷
বিভিন্ন ধরণের ‘ডিমেনশিয়া' রয়েছে৷ এর মধ্যে বেশি পরিচিত হল ‘আলসহাইমার'৷ এটি এমন এক ধরণের রোগ, যা পরিপূর্ণ সুস্থ হয় না৷ তবে, যদি রোগটিকে আগে ভাগেই সনাক্ত করা যায় এবং ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ও ধূমপান এড়িয়ে চলা যায় তাহলে ‘ভাসকুলার ডিমেনশিয়া' কে প্রতিরোধ করা যেতে পারে৷
প্রতিবেদন: লিজা শ্লাইন/আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন