স্বপ্নে সব পাই, বাস্তবে হারাই
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯কোন দেশে একটা মানুষও এ স্বপ্ন দেখে না? এমন দেশ নেই বোধহয়৷ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান, সবচেয়ে অত্যাচারী মানুষটির পাশেও হয়ত এমন কেউ আছেন যিনি সুন্দর পৃথিবী গড়ায় সরাসরি ভূমিকা রাখতে না পারলেও স্বপ্ন দেখেন, কল্পনায় দেখতে ভালোবাসেন ‘‘পৃথিবী বদলে গেছে, যা দেখি নতুন লাগে৷''
পৃথিবী ধীরে ধীরে বদলায়, মানুষও বদলায়৷ তাই পরিবর্তনের আকাঙ্খা তীব্রতর হয়৷ কিন্তু বাস্তবতার বিপরীতে আকাঙ্খা বড় অসহায়৷ তাই শোষণ-নিপীড়ন, যুদ্ধ, অধিকার হরণ সব চলতে থাকে, চলতে থাকে আরো বেশি করে৷
ইরাকে যুদ্ধ থামে তো ইয়েমেনে শুরু হয়৷ আফগানিস্তানে চলে যুদ্ধের আগের ও পরের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া৷ মালালা ইউসুফজাই দেশ ছেড়ে প্রাণ বাঁচান, যে দেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে লাদেনও প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
শান্তি পুরস্কার নিয়ে গদিতে বসে থাকেন অং সান সুচি আর নির্যাতন-অত্যাচারে মিয়ানমার ছাড়েন লাখ লাখ রোহিঙ্গা৷ ৭০ বছরেও শান্তি আসে না কাশ্মীরে, কাশ্মীরিদের বুকে বিঁধে হিন্দুত্ববাদী মোদীর ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের তির৷ ইউরোপে নেমে আসে শরণার্থীর ঢল, ম্যার্কেলরা স্বাগত জানান তো আরেকপক্ষ ভোট বাড়ায় বিতাড়নের রাজনীতিতে ; গণতন্ত্র, মানবিক অধিকারের ভূখণ্ডে প্রকাশ্যে কাঁদে কাতালান-প্রাণ৷
‘সুন্দর পৃথিবী' কোথায় হবে তাহলে? দূরে নয়৷ জানি, ‘‘মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর৷'' স্বর্গ থেকে নরক হয়ত বহু দূরে, কিন্তু সুর আর অসুর কাছের প্রতিবেশী৷ নিউজিল্যান্ডে তাই নরক নামে খুনির আস্ফালনে, আবার স্বর্গও জেগে ওঠে জেসিন্ডা আর্দার্নের নেতৃত্বে, বুঝি, নিউজিল্যান্ডই তো একখণ্ড সুন্দর পৃথিবী!
আবার স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর৷ নিউজিল্যান্ডে মানবতাবাদের কাছে ধর্মান্ধতা, উগ্র জাতীয়তাবাদের পরাজয় আবার স্বপ্ন দেখায় আমাদের৷ অন্ধকার, অনিঃশেষ এক সুড়ঙের ওপারে যেন এক বিন্দু আলো দেখি৷ মনে হয় হিটলার, মুসোলিনিরা হেরেছে ট্রাম্প, মোদী, নেতানিয়াহু, এর্দোয়ান, আসাদদেরও নিশ্চয়ই হার হবে একদিন৷ সেদিন ধর্ম-বর্ণের কারণে কোথাও কোনো মানুষ হবে না অনাহূত; গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের খোলস ছিঁড়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পতাকা ওড়াবে মানুষ৷
এই স্বপ্ন মরে না, থাকে মানুষেরই লেখায়, কথায়, গানে, জীবনযাপনে৷
‘ন্যাশনালিজম', অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ শব্দটির বয়স আড়াইশ' বছরের একটু বেশি হলেও ধারণাটা বেশ প্রাচীন৷ এর সীমাবদ্ধতা বা বিপদ হয়ে ওঠা নিয়ে জ্ঞানী-গুণীদের, এমনকি সাধারণ পরিচিতজনদের বক্তব্যও পড়েছি, শুনেছি৷ অস্ট্রেলিয়ার এক অধ্যাপক গত শতকে লিখেই দিয়েছিলেন— ২০ শতক হলো জাতীয়তাবাদের মোহমুক্তি আর আন্তর্জাতিকতাবাদের উন্মেষের সময়৷ অথচ একুশ শতকেও দিকে দিকে দেখি উগ্র জাতীয়তাবাদের দাপট৷ তবু কোটি মনে বাজে জন লেননের গান,
‘‘ইমাজিন দেয়ার'স নো হেভেন
ইট'স ইজি ইফ ইউ ট্রাই
নো হেল বিলো আস
অ্যাবাভ আস অনলি স্কাই...
ইমাজিন অল দ্য পিপল
লিভিং ফর টুডে...
ইমাজিন দেয়ার'স নো কান্ট্রিজ
ইট ইজন'ট হার্ড টু ডু
নাথিং টু কিল অর ডাই ফর
অ্যান্ড নো রিলিজিয়ন টু...
ইমাজিন অল দ্য পিপল
লিভিং লাইফ ইন পিস
ইউ মে সে দ্যাট আ'ম আ ড্রিমার
বাট আ'ম নট দ্য অনলি ওয়ান
আই হোপ সামডে ইউ'ল জয়েন আস
অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড উইল বি ওয়ান...
ইমাজিন নো পজেশন্স
আই ওয়ান্ডার ইফ ইউ ক্যান
নো নিড ফর গ্রিড অর হাঙ্গার
আ ব্রাদারহুড অব ম্যান...
ইমাজিন অল দ্য পিপল
শেয়ারিং অল দ্য ওয়ার্ল্ড
ইউ মে সে আ'ম আ ড্রিমার
বাট আ'ম নট দ্য অনলি ওয়ান
আই হোপ সামডে ইউ উইল জয়েন আস
অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড উইল বি অ্যাজ ওয়ান...''
লেননের প্রাণ কাড়ে আততায়ীর গুলি, তবু স্বপ্ন বেঁচে থাকে৷
আশীষ চক্রবর্ত্তীর ব্লগ-পোস্টটি কেমন লাগলো জানান বন্ধুরা, লিখুন নীচের ঘরে৷