‘যদি আরো লাশ মেলে...’
১২ আগস্ট ২০১৪সোমবার ঐ উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণার আগের দিন, অর্থাৎ রবিবার, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন করেছে আরেকটা কাজ৷ তারা নিখোঁজ যাত্রীর সংখ্যা দাপ্তরিকভাবে কমিয়ে ফেলেছে৷ শনিবার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মোট নিখোঁজ যাত্রী ছিলেন ১১২ জন৷ তাঁদের তালিকাও টাঙানো ছিল মাওয়া ঘাটের তথ্য কেন্দ্রে৷ কিন্তু রবিবার হঠাৎ করেই তালিকা সরিয়ে ৬১ জন নিখোঁজের তালিকা টানানো হয়৷ অর্থাৎ ৫১ জন নিখোঁজ যাত্রী তালিকা থেকে উধাও হয়ে যান৷ মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল দাবি করেন, ৬১ জনই সঠিক৷ আগের তালিকা ভুল ছিল৷ তবে নতুন তালিকা কিভাবে বানানো হলো তার ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি৷
গত সোমবার মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটের কাছে আসার পর পিনাক-৬ লঞ্চটি পদ্মায় ডুবে যায়৷ লঞ্চে প্রায় ৩০০ যাত্রী ছিলেন৷ এর মধ্যে ১০০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে৷ আর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৫০টি৷
সোমবার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল মাওয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার অভিযান শেষ করার ঘোষণা দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাস্তবতা, সময় বিবেচনা, নদীর পরিস্থিতি ও আবহাওয়া – সব কিছু বিবেচনা করেই আমরা মনে করছি যে, লঞ্চ শনাক্তকরণ তৎপরতা আর চালানোর কোনো অবকাশ নাই৷ চালানোর কোনো প্রয়োজনও নেই৷ বা চালালে ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যাবে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না৷ তাই এই লঞ্চ শনাক্তকরণ তৎপরতা আমরা স্থগিত ঘোষণা করছি৷ তবে অন্যান্য কার্যক্রম – যেমন লাশ খোঁজা ইত্যাদি অব্যাহত থাকবে৷''
তিনি দাবি করেন, ‘‘ফায়ার ব্রিগেড, কোস্ট গার্ড, বিআইডাব্লিউটিএ, নৌ-বাহিনী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ লোকবল ও নৌ-যান এবং সবচেয়ে শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্যবহার করে তল্লাশি চালিয়েছে৷ চেষ্টার কোনো ত্রুটি করা হয়নি৷''
কিন্তু নিখোঁজদের স্বজনরা এটা মানতে পারছেন না৷ তাঁরা উদ্ধার অভিযান শেষ করার ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা তো আর কিছু চাই না, শুধু প্রিয়জনের লাশটা বাড়ি নিয়ে কবর দিতে চাই৷ সেই চাওয়া কি পূরণ হবে না!''
ফরিদপুর থেকে স্বজনের খোঁজে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা যাব না, আমরা লাশ নিয়েই যাব৷ আমরা আমাদের সাধ্যমত খুঁজব৷''
পদ্মার দুই তীরে শোকার্ত মানুষের ভিড় এখনো একই আছে৷ তাঁদের কান্না এবং কষ্টে স্থানীয়রাও সমব্যথী৷ তাই প্রশাসন শেষ করলেও সাধারণ মানুষ থামছেন না৷ তাঁরা দেশীয় ‘কপ্পা' পদ্ধতিতে এখনো অনুসন্ধান চালাচ্ছেন৷ এই পদ্ধতিতে নৌকা থেকে দড়ির মাথায় ভারী কোনো বস্তু বেধে নদীতে ফেলা হচ্ছে৷ সেই দড়িতে নদীর তলদেশে কিছু আটকে গেলে তা দিয়ে ধারণা করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে আটকে যাওয়া বস্তুটি কী৷''
স্থানীয়রা জানান, এভাবে এর আগে আগেও ডুবে যাওয়া লঞ্চ চিহ্নিত করা হয়েছে, উদ্ধার করা হয়েছে লাশ৷ বলা বাহুল্য, স্বজন হারাদের কেউ কেউ নিজেরাই নদীতে নেমে পড়েছেন দেশি নৌকা এবং কপ্পা নিয়ে৷ কারণ এখন কপ্পাই যে তাঁদের শেষ ভরসা৷