তদন্ত হয়, বিচার নয়
৮ আগস্ট ২০১৪
গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে লঞ্চ দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ গত ৩৮ বছরে এরকম লঞ্চ দুর্ঘটনায় ৮৬৩টি তদন্ত কমিটির মধ্যে ৫০০টি তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করলেও, এখনও পর্যন্ত মাত্র চারটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে৷ প্রসঙ্গত, এ সব তদন্ত কমিটির অধিকাংশই গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআইডাব্লিউটিএ-র উদ্যোগে৷
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং নৌযান বিশেষজ্ঞ খাবিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘এ সব তদন্ত লোক দেখানো''৷ তিনি বলেন, ‘‘কারুর শাস্তি তো হয়ই না, উপরন্তু যাঁদের নকশা অনুমোদন পেয়েছে, তাঁদের কেউই তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরোয়া করেন না৷ এছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও নৌযান মনিটর করার মতো লোকবলও নাই বিআইডাব্লিউটিএ-র৷ আর তার ওপরে আছে দুর্নীতি৷''
বিআইডাব্লিউটিএ-র সাবেক সচিব সৈয়দ মনোয়ার হোসেন জানান, ‘‘তদন্ত কমিটির রিপোর্ট তৈরি করেন নৌপথ বিভাগের সার্ভেয়ার এবং পরিদর্শকরা৷ এ সব কর্মকর্তারাই নৌযানের ত্রুটিযুক্ত নকশা অনুমোদন করেন৷ ফলে তাঁদের প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ধেকে যায়৷'' তাঁর মতে, ‘‘তদনত্ম কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনা, কারণ প্রায় একই থাকে৷ শুধু লঞ্চ, মালিক, স্থান এবং যাত্রী সংখ্যার পরিবর্তন হয়৷''
তিনি জানান, সেমবার পদ্মায় ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চটির ধারণ ক্ষমতা ৮৫ জন যাত্রী৷ অখচ লঞ্চটি তিন শতাধিক যাত্রী বহন করছিল৷ বিআইডাব্লিউটিএ-র অবশ্য দাবি যে, তারা তদন্তের আলোকে বিভিন্ন সময় লঞ্চ মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন৷
পিনাক-৬
পদ্মায় লঞ্চডুবির ঘটনায় বৃহস্পতিবার আরো নয়টি লাশ উদ্ধার হয়েছে৷ এ নিয়ে চার দিনে ৩৩টি লাশ উদ্ধার করা হলো৷ তবে দুর্ঘটনার চার দিনেও লঞ্চের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি৷
ওদিকে নদীর তীরে শোকাহত স্বজনেরা এখনো অপেক্ষা করছেন৷ প্রিয়জনদের আর জীবিত পাওয়ার আশায় নয়, তাঁরা অপেক্ষা করছেন লাশের আশায়৷
অন্যদিকে বিআইডাব্লিউটিএ-র চেয়ারম্যান ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী৷ এ সময় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে৷
গত সোমবার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে এমএল পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়৷ এই ঘটনায় এখানো ১৩৭ জন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন৷