‘গ্রহণযোগ্যতা’ পাননি সিসি
১ জুন ২০১৪মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে যে ফল প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে অবসরপ্রাপ্ত ফিল্ড মার্শাল সিসি পেয়েছেন ৯৬ শতাংশ ভোট৷ পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ভোটারের মধ্যে ৪৬ শতাংশ এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন বলে দাবি করা হলেও, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন সিসির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হামদিন সাবাহি৷ তিনি নিজে ৩ শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছেন৷
২০১২ সালের নির্বাচনের কথা বাদ দিলে মিশরের জনগণ শাসক হিসেবে কেবল সেনাপ্রধানদেরই দেখে এসেছে৷ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সিসি প্রেসিডেন্ট হিসাবে আইনি বৈধতা পেলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
হোসনি মুবারকের তিন দশকের স্বৈরাশাসনের অবসানের পর, ২০১২ সালে মিশরের ইতিহাসের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মোহাম্মদ মুরসি৷ কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় এবং সিসির নেতৃত্বে সেনাবাহিনী মুরসিকে উৎখাত করে৷
মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ হওয়ায় এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আল-সিসির জয় এতটাই নিশ্চিত ছিল যে ভোটারদের মধ্যে কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ দেখা যায়নি মোটেই৷ যদিও সিসি ৮০ শতাংশ ভোট বাক্সে পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন৷
সরকারি প্রচারমাধ্যম শেষ পর্যন্ত ৪৬ শতাংশ ভোট পড়ার কথা দাবি করলেও পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এই হার ২০ শতাংশের মতো হবে৷ আর বামপন্থি প্রার্থী হামদিন সাবাহির দাবি, ভোট পড়ার হার কোনোভাবেই ১৫ শতাংশের বেশি হবে না৷
এই সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ভোটের প্রথম দিন ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়৷ এরপর বুধবারের ভোট চলার মধ্যেই ভোটের সময় আরো একদিন বাড়ানোর চেষ্টা চলে৷
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাপদাহের কারণে অনেকেই কেন্দ্রে যেতে না পেরে ভাটের দিন বাড়ানোর আবেদন করেছেন৷ তবে অনেকেই একে ‘জালিয়াতির চেষ্টা' হিসাবে আখ্যায়িত করায় বুধবারই ভোটগ্রহণ শেষ হয়৷
কায়রোর ২৮ বছর বয়সি স্থপতি ওমর আমিন বলেন, ‘‘এটা রীতিমতো হাস্যকর৷ কে জিতবে সেটা আর চিন্তার বিষয় নয়, কতো ভোট পাবে – সেটাই মুখ্য৷''
আমিনের মতো অনেকেই ভোট দিতে যাননি এবং এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন৷ তাঁদের মন গলাতে ভোটের দ্বিতীয় দিন বুধবার মিশরে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি নেয়া হয় আরো কিছু ব্যবস্থা৷ বিপণি বিতানগুলো স্বাভাবিক সময়ের আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়৷ আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি নেতারা ফতোয়া দেন – ভোট না দেয়া আর রাষ্ট্রকে অসম্মান করা সমার্থক৷ এমনকি মিশরীয় কপটিক চার্চের পোপও ভোট দেয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে বিবৃতি দেন৷
মিশরীয় এক তরুণী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করায় মুসলিম ব্রাদারহুডকে তাঁরা সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়েছিল৷ এখন দেখছি এঁরাও ভোটের জন্য ধর্মীয় নেতাদের ব্যবহার করছেন৷''
কেবল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই নয়, যাঁরা ভোট দেননি তাঁদের সমালোচনায় মুখর হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমও৷ এক টিভি উপস্থাপক তো বলেই ফেলেছেন – যাঁরা ভোট দিতে যাননি তাঁদের আত্মহত্যা করা উচিত৷
এর জবাবে আইনের ছাত্র মার্ক দিমিত্রি রসিকতার সুরে বলেন, ‘‘আমি বরং আত্মহত্যাকেই বেছে নিতাম, তবু ভোট দিতে যেতাম না৷''
২৩ বছর বয়সি দিমিত্রির বিশ্বাস, ক্ষমতায় এখন যেই আসুক, মিশরের ভাগ্য বদলানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব হবে না৷
‘‘কেবল তরুণরাই এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে৷ আমরা মিশরকে আরো ভালো অবস্থায় দেখতে চাই৷ কিন্তু এ জন্য সময় দরকার৷ মিশর শাসন করার বয়স যখন আমাদের হবে, আমরা তা করব অন্যভাবে৷''
দিমিত্রির সহপাঠী আহমেদ মোহাম্মেদ সেইফ বলেন, ‘‘মিশরের বিচার ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী৷ কিন্তু এই দেশটা প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মে চলে না৷ এখানে সর্বত্র দুর্নীতি৷ এর পরিবর্তন প্রয়োজন এবং কেবল নতুন প্রজন্মের পক্ষেই এটা করা সম্ভব৷''
জেকে/ডিজি (আইপিএস, এএফপি)