সিরিয়ায় জার্মান জিহাদি
২৬ অক্টোবর ২০১৩জার্মান জিহাদিদের দৃষ্টিকোণ থেকে সিরিয়ায় যাওয়ার নানা যুক্তি আছে৷ সেখানে তারা জিহাদি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষ, অর্থাৎ ‘‘অবিশ্বাসীদের'' বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে৷ সেখানে তারা শিয়া-সুন্নি সংঘাতে সামিল হতে পারে, যার উপর নাকি মধ্যপ্রাচ্যে কোন সম্প্রদায়ের আধিপত্য কায়েম হবে, তার নিষ্পত্তি নির্ভর করবে৷ এছাড়া সিরিয়ার ধ্বংসস্তূপে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাও কিছু কম লোভনীয় নয়৷
সিরিয়ায় ‘‘জার্মান ক্যাম্প''
এই সব লক্ষ্য সামনে রেখে অনেক সুন্নি চরমপন্থি আজ সিরিয়ার মাটিতে অস্ত্র হাতে করেছে – এমনকি তাদের সংখ্যা দশ হাজার হতে পারে৷ তাদের কাছে আল-কায়েদার আদর্শের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী জিহাদের মিল আছে৷ সিরিয়ায় আরো যে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ইসলামপন্থি রয়েছে, তারা মূলত আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই ব্যস্ত, বিশ্বব্যাপী জিহাদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্কে নেই৷জার্মানির ‘‘ডের স্পিগেল'' পত্রিকা ফেডারাল গুপ্তচর বিভাগের সূত্রে জানাচ্ছে যে, সিরিয়ায় জার্মানি থেকে আসা শ'দুয়েক তথাকথিত জিহাদিরা অবস্থান করছে৷ তাদের অধিকাংশই এসেছে পশ্চিমের নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্য থেকে – এছাড়া হেসে, বার্লিন, বাভেরিয়া ও হামবুর্গ রাজ্য থেকেও কিছু কিছু জিহাদি আছে৷ এদের অর্ধেকের বেশির জার্মান নাগরিকত্ব আছে৷ দৃশ্যত জার্মানি থেকে আগত জিহাদিরা সিরিয়ায় ‘‘জার্মান ক্যাম্প'' নামে পরিচিত একটি শিবিরে বাস করে৷
জিহাদি, কিন্তু যোদ্ধা নয়
সিরিয়ার যুদ্ধে জার্মানি থেকে আসা জিহাদিরা কি ভূমিকা পালন করছে, তা বলা শক্ত৷ তাদের যুদ্ধের অভিজ্ঞতাও হয় সীমিত, নয়ত অনুপস্থিত৷ সে তুলনায় বেশ কিছু আন্তর্জাতিক জিহাদি বসনিয়া, আফগানিস্তান কিংবা ইরাকে যুদ্ধ করে এসেছে৷ তাদের আছে অভিজ্ঞতা৷ অপরদিকে জার্মানি থেকে আসা জিহাদিদের আছে আদর্শবাদ৷ কিন্তু প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা ছাড়া তারা ‘যোদ্ধা' হয়ে উঠতে পারে না৷
কিন্তু যোদ্ধা না হলেও, ইসলামপন্থিদের কাছে এই জার্মান জিহাদিদের অন্যান্য উপযোগিতা থাকতে পারে৷ তাদের মধ্যে হয়ত এমন কেউ আছে, যে অর্থসংগ্রহ কিংবা সংগঠনের কাজটা ভালো বোঝে এবং পারে৷ কেউ হয়ত মিডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারে – যেমন ইন্টারনেটের মাধ্যমে নতুন রংরুট সংগ্রহ করতে পারে৷ কাজেই জার্মান জিহাদিদের কাজের অভাব হয় না৷
জার্মান জিহাদিরা আর্বি ভাষা না জানার ফলে অন্যান্য দেশ থেকে আসা জিহাদিদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলতে পারে না৷ সেটাও তাদের সিরিয়ায় নিঃসঙ্গ বোধ করার একটা কারণ৷ এছাড়া তাদের এই বিদেশে যেভাবে থাকতে হয়, যা খেতে দেওয়া হয়, সমৃদ্ধ দেশ জার্মানি থেকে এসে তারা তা-তে অভ্যস্ত নয়৷ অপরিচিত সব রোগ, সেই সঙ্গে জীবনের ভীতি – কেননা ইসলামপন্থিদের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলির উপরে প্রায়শই আক্রমণ চালিয়ে থাকে আসাদ বাহিনী৷
না পাসপোর্ট, না টাকা
জার্মান জিহাদিরা এই সব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে যখন দেশে ফেরে, তখন তাদের মনের অবস্থা কি থাকে, তা বলা শক্ত৷ তারা এদেশে কি এবং কতটা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে, সেটা যাচাই করার জন্য আগে জানা দরকার, তারা সিরিয়ায় কি শিখেছে, এবং কতটা জিহাদি চেতনা ও প্রেরণা নিয়ে ফিরে এসেছে৷ অন্তত তাদের পূর্ণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মরিয়া সন্ত্রাসবাদি বলে গণ্য করার আপাতত কোনো কারণ নেই, বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷
জার্মান গুপ্তচর বিভাগ বলে, জার্মান জিহাদিদের অনেকেই বিদেশে যে হতাশাজনক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে, তার ফলে তারা দেশে – অর্থাৎ জার্মানিতে ফিরতে উদগ্রীব৷ কিন্তু সেটাও সহজ কথা নয়, কেননা তারা হয়ত ভিসা না নিয়ে ঢুকেছে, এমনকি পাসপোর্ট নেই, আর্থিক সম্বল তো নেই-ই৷ কাজেই শেষমেষ জার্মান দূতাবাসের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না৷