সিরিয়া ইস্যুতে মধ্যস্থতা
৮ অক্টোবর ২০১৩আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিরিয়া সরকার৷ ঠিক এ সময় সিরিয়া সংকটে মধ্যস্থতা করার জন্য জার্মানিকে বড় ভূমিকা পালন করতে আসাদ সরকারের আহ্বান সবাইকে বেশ চমকে দিয়েছে৷
জার্মান পত্রিকা ‘ডের স্পিগেল'-এ খুব সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সিরিয়া সংকটে জার্মানিকে মধ্যস্থতা করতে আহ্বান জানান৷ এবং একইসাথে সিরিয়ায় সহিংসতার জন্য তার দায়ভারকে অস্বীকার করেন৷ আসাদ বলেন, মধ্যস্থতা করার অর্থ এই নয় যে সিরিয়ার সরকারকে সমর্থন করতে হবে৷ বরং আলোচনা করে সত্য কী তাই তুলে ধরারই আহ্বান জানান আসাদ৷
সহযোগিতার আহ্বান নাকচ
সোমবার আফগানিস্তান সফরের সময় জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে এ প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন৷ বলেন, জাতিসংঘের বিশেষ দূত লাখদার ব্রাহিমি সেখানকার রাজনৈতিক সংকট সমাধানে যেভাবে মধ্যস্থতা করছেন, সেটাকে পূর্ণ সমর্থন করেন তারা৷ ২১শে আগস্ট রাসায়নিক হামলা চালানোর ব্যাপারে আসাদ সরকারের দায় অস্বীকারের সমালোচনা করেন তিনি৷ দায় এড়ানো কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন ভেস্টারভেলে৷
জার্মানির সিদ্ধান্ত সঠিক
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একমত জার্মান বিশেষজ্ঞরা৷ জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স-এর মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ গিডো স্টাইনব্যার্গ জার্মানির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেছেন, প্রস্তাব নাকচ করে সঠিক কাজই করেছেন তারা৷ কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক টোমাস ইয়েগারও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে৷ জার্মানি যদি এই দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে, তবে সেটা রাজনৈতিকভাবে ঔদ্ধত্য দেখানো হবে৷
জার্মানির জন্য সঠিক পন্থা
স্টাইনব্যার্গের মতে সিরিয়া ইস্যুতে জার্মানির সঠিক কাজটি করা উচিত৷ প্রথমত, শরণার্থীদের জন্য কিছু করা, যাতে সিরিয়ার জনগণ মনে করে যে তাদের জন্য জার্মান সরকার ভাবছে৷ তাঁর মতে, শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে সীমান্ত খুলে দিতে পারে তুরস্ক৷ আর সেক্ষেত্রে সেখানে সব ধরনের সহায়তা দিতে পারে জার্মানি৷ এমনকি, লেবানন এবং জর্ডানে যেসব শরণার্থী রয়েছে তাদেরও সাহায্য করতে পারে তারা৷
দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন শরণার্থীদের জন্য যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে অংশ নিতে পারে জার্মানি৷ তাই ইয়েগারও মনে করেন যে, সিরিয়ায় মানবিক সহায়তা দেয়াটাই জার্মানির জন্য সঠিক পন্থা হবে৷
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একমত
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন মঙ্গলবার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট আসাদ আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র পরিদর্শকদের সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছেন৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি জানান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কিভাবে ধ্বংস করা হবে সে ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছেছে৷ ইন্দোনেশিয়ার বালিতে এশীয় প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক বাণিজ্য সম্মেলনে তাদের এ বৈঠক হয়৷ এক বছরের মধ্যেই বিশেষজ্ঞরা সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র মুক্ত করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুটিন৷
বান কি-মুনের পরামর্শ
এদিকে, সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র মুক্ত করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১১ পৃষ্ঠার চিঠি পাঠিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন৷ সেখানে বলা হয়েছে, সিরিয়ার বিষাক্ত গ্যাসের সম্ভার ধ্বংসের এই ভয়ংকর অভিযানে জাতিসংঘের অন্তত ১০০ বিজ্ঞানী, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্বে রাসায়নিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ‘অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অফ কেমিক্যাল উয়েপেন্স'-এর উপস্থিতি প্রয়োজন, যারা সেখানে থেকে পুরো বিষয়টি তদারকি করবেন৷
তিনি লিখেছেন, সিরিয়ার ১ হাজার টন রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করতে অভিযান শুরু হবে এ বছরের ১লা নভেম্বর আর শেষ হবে আগামী বছরের ৩০শে জুন৷ সাধারণত এত বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ধ্বংস করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়৷ আর সে কারণেই যৌথভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন বান কি-মুন৷
অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অফ কেমিক্যাল উয়েপন্স বা ওপিসিডাব্লিউ এবং জাতিসংঘ এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, সিরিয়ায় যে সহিংসতা চলছে তাদের অভিযান সেটা বন্ধ করতে সক্ষম নয়৷ তবে সিরিয়া থেকে এ সব অস্ত্র নির্মূল করা গেলে সহিংসতা দমনে তা বড় ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করেন জাতিসংঘের মহাসচিব৷