সিরিয়া সংকট
১৮ মে ২০১২হুদা জাইন জার্মানির মারবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকট ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক৷ সিরিয়ায় বিরোধীপক্ষ মূলত তিনটি প্রশ্নে একমত হতে পারছে না, বলে তাঁর ধারণা৷ প্রথমটি হল সামরিক হস্তক্ষেপের প্রশ্ন৷ এক্ষেত্রে সিরীয় জাতীয় পরিষদ বা এসএনসি, যারা সিরিয়ার বাইরে থেকে সক্রিয়, তারা সামরিক হস্তক্ষেপের সপক্ষে৷ অপরদিকে প্রধানত সিরিয়ায় অবস্থিত, ‘গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য জাতীয় সমন্বয় কমিটি' বা এনসিসি নামধারী গোষ্ঠী সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে৷ সামরিক হস্তক্ষেপ দেশে রক্তাক্ত সংঘর্ষ বন্ধ করার দ্রুত পন্থা, বলে এসএনসি'র ধারণা৷ এনসিসি'র মতে, সামরিক হস্তক্ষেপ হলে সহিংসতা আরো বাড়বে৷
দ্বিতীয় প্রশ্ন: বিরোধীদের তথাকথিত ‘স্বাধীন সিরীয় সেনাবাহিনি'-কে অস্ত্রসরবরাহ করা সমীচিন হবে কিনা৷ তৃতীয় প্রশ্ন: আসাদ সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার কোনো অর্থ আছে কিনা৷ এবং এখানেই বিবাদের অন্ত নয়৷ বাশার আল-আসাদ'কে যেতে হবে বটে, কিন্তু তাকে কীভাবে যেতে রাজি করানো যায়, তাই নিয়েও দ্বিমত৷ আসাদের পর সিরিয়ায় কি ধরণের রাজনৈতিক ব্যবস্থা হবে, সে' প্রশ্নেও এসএনসি চায় একটি নতুন, বেসামরিক, গণতান্ত্রিক সরকার৷ এনসিসি আরো এক পা এগিয়ে রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে পরিষ্কার বিভাজন দেখতে চায়: ধর্মনিরপেক্ষভাবে আইনের শাসন ও নাগরিক অধিকারের গ্যারান্টি৷
সিরীয় জাতীয় পরিষদ বা এসএনসি'র রক্ষণশীল ধ্যানধারণার পিছনে যে মূল সত্যটা কাজ করেছে, সেটা হল এই যে, এসএনসি'তে বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও মুখ্য প্রভাব হল মুসলিম ভ্রাতৃত্বের, বলেন হুদা জাইন৷ অপরদিকে জাতীয় সমন্বয় কমিটি বা এনসিসি মূলত বামঘেঁষা উদারপন্থি গোষ্ঠীগুলির সমন্বয়ে সৃষ্টি৷ এবং দু'তরফই সাধারণ সিরীয়দের থেকে অনেক দূরে সরে গেছে বলে মনে করেন সাংবাদিক তথা মানবাধিকার আন্দোলনকারী রুলা আজাদ৷
আজাদ বলেন, সিরিয়ায় যারা বাস ও কাজকর্ম করেন, তারা এসএনসি কিংবা এনসিসি'কে আর নিজেদের প্রতিনিধি বলে মনে করেন না৷ ঐ দু'টি সংগঠন যেন দূরে বসে, সিরিয়ায় যা ঘটছে, তার উপর মন্তব্য করে, কিন্তু নিজেরা তা' থেকে সরাসরি প্রভাবিত হয় না৷ এসএনসি তো প্রায় পুরোপুরি, এবং এনসিসি আংশিক দেশের বাইরে থেকে কাজ করে৷ দেশে যারা সব নিপীড়ন অগ্রাহ্য করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিছিল করছে, তাদের কাছে এ দু'টি সংগঠন পর হয়ে গেছে৷ এখন মানুষ স্থানীয়, নিজের শহরে কি লোকালয়ে অবস্থিত সমন্বয় কমিটি'র কাছেই যায় - জানাচ্ছেন রুলা আজাদ৷
হুদা জাইন'ও সে কথা সমর্থন করেন৷ আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজ বা বিরোধীপক্ষ, কেউই তাদের সাহায্য করছে না বলে সিরিয়ার মানুষের ধারণা৷ যেন তারা একাই আসাদ ও তার সেনা-পুলিশের মুখোমুখি৷ এর মূল কারণ, বিরোধী সংগঠনগুলি একমত নয়, বিরোধীপক্ষের কোনো একক রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই৷ সেই একীকরণের প্রক্রিয়া না হলেও, তার প্রচেষ্টা চলেছে সিরিয়ার শহরে-শহরে, গ্রামে-লোকালয়ে৷ এই সমন্বয় কমিটিগুলি যেন সেই ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, তরুণ জনতার চোখে গোটা আন্দোলনের বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরৎ দেবার চেষ্টা করছে, বলেন রুলা আজাদ৷ কেননা সিরিয়ার সংঘাতে প্রাণ দিচ্ছে তো তারাই৷
অপরদিকে দু'টি মুখ্য বিরোধী জোট তাদের দায়িত্ব পালন করতে, সব সরকার-বিরোধীদের প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হয়েছে, বলেন হুদা জাইন৷
প্রতিবেদন: কের্স্টেন নিপ/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ