সিটি নির্বাচন বর্জন করলো বিএনপি
২৮ এপ্রিল ২০১৫
ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রগুলো দখল করা শুরু হলে ভোটকেন্দ্রগুলো ফাঁকা হয়ে যায়৷ ঠায় বসে থাকেন নির্বাচনি কর্মকর্তারা৷ তার সঙ্গে চলে ব্যালট পেপারে ‘সিল'৷ ঢাকায় পুলিশ ও নির্বাচনি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও সরাসরি জালভোটে অংশ নেয়ার অভিযোগ শোনা যায়৷
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তরের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ৷ এ সময় তাঁর পাশে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন৷
সংবাদ সম্মেলনে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচন তো দূরের কথা, পুরো নির্বাচনকেই অর্থহীন করে দিয়েছেন সরকার ও নির্বাচনি কর্মকর্তারা৷ আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন পুলিশ ও ব়্যাব নিয়ে সরকারের ইচ্ছাপূরণ করতেই আমাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে৷''
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫১টি কেন্দ্র থেকে মির্জা আব্বাসের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়৷ আর সকাল ১০টার মধ্যেই ভোট শেষ হয়ে গেছে এ সব কেন্দ্রে৷''
ঢাকা উত্তরের বেশ কিছু কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে তিনি সেই সব কেন্দ্র থেকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন৷ ভোট দিয়ে আসার সময় অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁর৷
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘‘এটা কোনো নির্বাচন হয় নাই৷ এটাকে কোনো নির্বাচন বলা যায় না৷ এই নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি৷ এই মুহূর্ত থেকে আমরা এ নির্বাচন থেকে আমাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করালাম৷ এই নির্বাচন বর্জন করলাম৷''
এর আগে মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট উন্নয়ন আন্দোলনের নির্বাচনি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন সেখানকার বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলম৷ তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী৷
মনজুর আলমের অভিযোগ, ‘‘ভোটকেন্দ্রগুলোর ৮০ শতাংশ কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ক্যাডারা৷ নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই৷ বিভিন্ন এলাকায় আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে তারা৷ ভোটকেন্দ্রে আমাদের কোনো এজেন্টকে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি৷ তাই নির্বাচন বয়কট করতে বাধ্য হয়েছি৷'' একই সাথে ভবিষ্যতে আর রাজনীতি না করার ঘোষণাও দেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী৷
এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদ মাহবুব উল আলম হানিফ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘পরাজয় নিশ্চিত জেনে আন্দোলনের ইস্যু সৃষ্টির জন্য নাটক করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷ তাই তাঁর নির্দেশেই বিএনপির প্রার্থীদের এই ভোট বর্জন৷''
হানিফ বলেন, ‘‘বিএনপি যখন দেখেছে যে, তাদের প্রার্থীরা ভরাডুবির মধ্যে আছে, তখনই তারা নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না বলে প্রচার শুরু করে দেয় মিডিয়ার কাছে৷ এবং দুপুর না হতেই তিন সিটিতে নির্বাচন বর্জন করেছে তারা৷''
তিনি দাবি করনে, ‘‘তারা নির্বাচন বর্জন করলেও সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বচ্চো ক্ষমতা দিয়েছে৷'' শুধু তাই নয়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি৷
এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকার্ট ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট বর্জন কোনো সমাধান হতে পারে না৷ যুক্তরাষ্ট্র ভোট বর্জন কখনোই সমর্থন করে না৷ তবে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যদি কারো কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে তা নির্বাচন কমিশনে জানানো যেতে পারে৷''
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বিএনপির ভোট বর্জন ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘বিএনপির ভোট বর্জনের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না৷ তবে আমাদের কাছে সংবাদ আছেযে, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে৷''
অন্যদিকে এই নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অধিকাংশ কেন্দ্র বেলা ১১ টার দিকে দখল হয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভোটাররা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন৷
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাংলাবাজার সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশ এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সরাসরি জালভোটে অংশ নিতে দেখা গেছে৷
মগবাজার ইস্পাহানি স্কুলের একজন ভোটার আব্দুর রউফ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সকাল ১১টা নাগাদ আমি গিয়ে দেখি ভোটকেন্দ্র ফাঁকা৷'' একই কেন্দ্রের আরেকজন ভোটার আবু সেলায়মান জানান, ‘‘সকাল নয়টার দিকে গিয়ে আমি লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছি৷ নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক৷'' প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘‘সকাল ১০টার পরপরই কেন্দ্রটি দখল হয়ে যায়, ভোটাররা ভয়ে চলে যান৷ কেন্দ্র ফাঁকা হয়ে যায়৷''
ভোটার এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের সব কেন্দ্রেই সকালে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ভালো৷ কিন্তু সকাল ১০টার পর থেকে কেন্দ্র দখল করে জালভোট দেয়া শুরু হয়৷ আর ১১টার ভিতর ফাঁকা হয়ে যায় অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র৷