সাবমেরিন দুর্ঘটনার জের
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ভারতীয় নৌ-বাহিনীর সাবমেরিন বহরে গত ছয় মাসে পর পর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় রীতিমত চিন্তিত সরকার৷ রিয়াল অ্যাডমিরাল পদের অফিসারের নেতৃত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সব'কটি সাবমেরিন দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে নিরাপত্তার সুপারিশ করবেন৷
২০১৩ সালের আগস্ট মাসে বড় রকম দুর্ঘটনায় ‘‘সিন্ধুরক্ষক'' নামের সাবমেরিনে মারা যায় ১৮ জন নৌ-সেনা৷ ফের দুর্ঘটনা ‘‘সিন্ধুরত্ন'' ডুবোজাহাজে৷ মারা যান দু'জন নৌ-সেনা৷ আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ প্রাথমিক কারণ হিসেবে অনুমান করা হচ্ছে, সাবমেরিনের ব্যাটারি চেম্বারে হাইড্রোজেন গ্যাস ‘লিক' করে ধোঁয়া বের হয় এবং সেই গ্যাসের ধোঁয়া নৌ-সেনাদের থাকার তিন নম্বর কুটরিতে ঢুকলে তাঁদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়৷ জ্ঞান হারান সাতজন৷ সাগররত্ন ডুবোজাহাজে তখন ছিলেন ৮০ জন নাবিক৷
এর নৈতিক দায়িত্ব স্বীকার করে নৌ-বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল ইস্তফা দেন৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ.কে অ্যান্টনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেন৷ যদিও ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যায়নি৷ একই নৈতিক দায়বদ্ধতার কারণে প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যান্টনির পদত্যাগ দাবি করেছে বিরোধীদল বিজেপি৷ ভারতে বিশাল সমুদ্রসীমা রক্ষায় নৌ-বাহিনী, তথা প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন শাখাকে আধুনিক ধাঁচে ঢেলে সাজাতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর গড়িমসিতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক দলগুলি৷
একাধিক প্রশ্ন উঠেছে কেন গত ছয় মাসে পর পর এতগুলি সাবমেরিন দুর্ঘটনা ঘটলো? কোথায় আসল গলদ? মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় সাবমেরিনগুলির যন্ত্রপাতির জীর্ণদশার কারণে এর অপারেশনযোগ্যতা কি হারিয়েছে? নাকি প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব অথবা স্রেফ মানবঘটিত ভুল? সবথেকে বড় কথা, সাবমেরিনটি দু'মাস আগে মেরামতির পর সমুদ্রে পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখা হচ্ছিল৷ নৌ-বাহিনীর কোনো কোনো মহল থেকে একথাও উঠেছে যে, আগের দুর্ঘটনার পর নৌ-প্রধান যোশী শ'পাঁচেক নৌ-সেনা ও অফিসারদের অন্যত্র বদলি করায় বাহিনীর মধ্যে একটা চাপা অসন্তোষ তৈরি হয়৷
তবে এ কথা সত্যি যে, নৌ-বাহিনীর ১৩টি কিলো ক্লাসের প্রচলিত সাবমেরিনের মধ্যে পাঁচটির প্রযুক্তিগত আয়ু প্রায় শেষ৷ রাশিয়া নির্মিত পাঁচটি সাবমেরিন সিন্ধুঘোষ, সিন্ধুধ্বজ, সিন্ধুরাজ, সিন্ধুবীর এবং সিন্ধুরত্ন নৌ-বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে৷ নৌ বিশেষজ্ঞদের মতে, দু'দশকের বেশি কোনো সাবমেরিনের অপারেশানাল যোগ্যতা থাকে না৷ রাশিয়া ছাড়া আধুনিক সাবমেরিন দেশের মাটিতেই তৈরির জন্য জামর্নির সহযোগিতা চায় ভারত৷ জার্মানির ইউ-২০৯ শ্রেণির সাবমেরিন, যা শিশুমার নামে পরিচিত, ২০০৪ সালে ভারতে তৈরির কাজ শুরু হতেই ঘুস কেলেঙ্কারিতে তা বাতিল করা হয়, এমনটাই অভিযোগ৷ তারপর ২০০৫ সালে ফরাসি ডিজাইনে ছয়টি সাবমেরিন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়৷ কিন্তু পদ্ধতি ও প্রকরণগত বিলম্বের কারণে ফ্রান্স সেই প্রকল্প থেকে সরে আসার হুমকি দেয়৷