সরকারি ব্যাংকগুলো ধুঁকছে
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০বিগত ৩ বছর ধরে দেশে বেসরকারি ব্যাংকগুলির লক্ষ্যণীয় উত্থান চোখে পড়েছে৷ তাতে কারো আপত্তি নেই৷ থাকার কথাও নয়৷ কিন্তু, দুশ্চিন্তার কারণ অন্য জায়গায়৷ তা হল, একদিকে যখন বেসরকারি ব্যাংকগুলিতে তরতরিয়ে গ্রাহকের আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে, তখনই আমানত জমা কমে গিয়ে কার্যত ধুঁকছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলি৷ সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলিতে গত বছর জমা পড়া আমানতের হিসেব৷ হিসেবে চোখ বুলিয়ে রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ বিশেষজ্ঞদের৷ অনেকের আশঙ্কা, এইভাবে সরকারি ব্যাংকে আমানত জমা পড়ার হার কমতে থাকলে অচিরেই অঘটন ঘটতে পারে৷ এমনকি, বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে৷
২০১৯ সালের জুলাই-ডিসেম্বর, এই ছয় মাসে তিনটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে জমা পড়া মোট আমানতের পরিমাণ মোট আমানতের প্রায় ৭০ শতাংশ৷ আটটি সরকারি ব্যাঙ্কের মোট আমানতের ৮৪ শতাংশ৷ বেসরকারি এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে আমানত জমা পড়েছে ১.১২ লক্ষ কোটি৷ আইসিআইসিআই ব্যাংকে ৫৫,৬১৩ কোটি৷ অ্যাক্সিস ব্যাংকে ৫০,৯৯৮ কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে দেশের আটটি বড় মাপের বেসরকারি ব্যাঙ্কের আমানত হু হু করে বেড়েছে৷ যার পরিমাণ ২.৬৮ লক্ষ কোটি৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমা পড়া আমানতের চেয়ে অনেক গুণ বেশি৷
এই প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলির মূল তফাৎ হল, বেসরকারি ব্যাংক শুধুমাত্র তাদের লাভের অঙ্ক কষেই ব্যবসা করে৷ সাধারণত দেশের জনগণের প্রতি তাদের তেমন কোনও সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে না৷
ভারতের মতো দেশে এমন ব্যাঙ্কিং নীতি ফলপ্রসূ হতে পারে না৷''তাঁর মতে, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির সামাজিক দায়িত্ব অনেক৷ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ব্যাংক পরিষেবা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর তারা৷ এই কাজে অনেক বেশি ব্যয় করতে হয় ব্যঙ্কগুলিকে৷ সেই তুলনায় গ্রামাঞ্চল থেকে নগদ আমানত জমা হওয়ার হার অত্যন্ত কম হয়৷ আর দেরি না করে এখনই সমগ্র ব্যাংকিং পরিষেবার বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের৷''যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছে, সরকারি ব্যাঙ্কের তুলনায় বেসরকারি ব্যাংকগুলির উন্নত ও ভালো পরিষেবার কারণেই সাধারণ মানুষ তাদের উপর বেশি ভরসা করতে শুরু করেছে৷ সেই সঙ্গে ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার বিভিন্ন সময়ে ‘রেপো রেট'সম্পর্কিত নির্দেশিকা সম্পূর্ণ ভাবে না মেনে পরিষেবা প্রদান করে৷ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের তুলনায় বেশি সুদ দেয় গ্রাহকদের৷
অথচ, গতবছরের প্রথমার্ধে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির বর্ধিত আমানত অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছিল৷ স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া এবং পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক-সহ মোট ৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আমানত ছিল ৫.২৫ লক্ষ কোটি৷ যা বেসরকারি ব্যঙ্কের(২.৫৩ লক্ষ কোটি)থেকে বেশি৷ কিন্তু, তারপর ছবিটা পাল্টেছে৷ বছরের শেষার্ধে আবারও অধোগতি৷ এক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়৷
ডয়চে ভেলেকে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকার জল-স্থল-অন্তরীক্ষ বিক্রি করতে উছেপড়ে লেগেছে৷ সরকারের ভ্রান্ত ব্যাঙ্কিং নীতির ফলেই এমনটা হয়েছে৷ সরকার যে ভাবে সব ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের পথে হাটছে, এটি তারই ফল৷ শুধু ব্যাংক নয়, রেল, বিমান, জল পরিবহন, এমনকী কয়লা খনি পর্যন্ত বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ বাদ দেয়া হয়নি মৃত্যুর পর পরিজনের জন্য সুরক্ষিত আমানতও৷ জীবনবিমা নিগম বিক্রি করার পদক্ষেপ তারই ইঙ্গিত৷''যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তুলনায় বেসরকারি ব্যাঙ্কের আমানত দ্বিগুনের বেশি হওয়ার অর্থ হল, ভারতে ৭০ শতাংশ গরিব মানুষের হাতে টাকা নেই৷ তাদের হাত আজও ফাঁকা রয়ে গিয়েছে৷