ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে আটকে যাচ্ছে ভারতের গরিব জনগোষ্ঠী
১৭ জানুয়ারি ২০১১নব্বইয়ের দশক থেকে ভারতেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ক্ষুদ্রঋণ৷ অল্প সুদে অল্প ঋণ নিয়ে কিছু একটা কাজ শুরু করার প্রচেষ্টা চালাতে এগিয়ে আসতে থাকে গরিব শ্রেণীর মানুষ৷ কিন্তু এখন নানা বিতর্ক এবং কেলেঙ্কারিতে ম্লান হয়ে যাচ্ছে এই ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য৷ অভিযোগ উঠছে, ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নাকি গরিব মানুষদের কাছ থেকে অধিক হারে মুনাফা করছে৷ এছাড়া সুদের হার বাড়ানোরও খবর পাওয়া গেছে৷ শুধু তা-ই নয়, এসব প্রতিষ্ঠানের হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে অনেকেই৷ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশেই নাকি এপর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে ৮৮ জন৷
ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে আটকে পড়া এমনি একজন চেন্নাই এর বিমলা রাজন৷ তিনি দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পেতে সাত বছর আগে ছুটে যান এক ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে৷ ঋণ গ্রহীতা নারীদের একটি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত হন তিনি৷ এই গ্রুপের মাধ্যমে তিনি প্রথমবার ৮৫ ইউরো ঋণ গ্রহণ করেন৷ ঋণ নেওয়ার সময় রাজন সব্জির ব্যবসা করার কথা বলেন৷ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা না করে বরং বাড়ি-ঘরের কাজে ব্যয় করেন তিনি৷
আর ঋণের টাকা শোধ করতেন নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত রাজনের স্বামী৷ কিন্তু প্রথম ঋণ শোধ না হতেই আবারও ৮৫ ইউরো ঋণ নেন রাজন৷ এভাবে কয়েক বছরের মধ্যে তৃতীয় দফা ঋণ নেন ৩৪৫ ইউরো৷ এরপর আবারও ২৬০ ইউরো ব্যাংক ঋণ নেন তিনি৷ এক পর্যায়ে সব্জি ব্যবসা শুরু করলেও তাতেও লাভ না হয়ে বরং ক্ষতির মধ্যে পড়েন রাজন৷ এভাবে এক ঋণ শোধ করতে আরেক ঋণ নিতে গিয়ে ঋণের চক্রে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকা পড়েন রাজন এবং তাঁর পরিবার৷
এভাবে দরিদ্র মানুষ একবার ঋণের জালে আটকা পড়লে সেখান থেকে বেরুনোর আর কোন পথ খুঁজে পাচ্ছেন না৷ তাই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা সুফল না এনে বরং উল্টো মরণ ফাঁদ হয়ে উঠছে গরিব মানুষদের জন্য৷ এ অবস্থায় ক্ষুদ্রঋণ প্রক্রিয়াকে ঠেলে সাজানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন