সমুদ্রের নীচে হারানো রোমান বসতি
১৪ জুন ২০১৯জুলিয়ো লাউরো বলেন, মাছ ধরে আর বেশি দিন সংসার চলবে না৷ তাই ইস্কিয়ার মৎসজীবীরা নতুন পথ বেছে নিয়েছেন৷ ছুটির মরসুমে তাঁরা পর্যটকদের চারিদিক ঘুরিয়ে দেখান৷ এর মধ্যে একটি নৌকো চোখে পড়ার মতো৷ জেলেরা নিজস্ব উদ্যোগে নীচে কাচের মেঝে লাগিয়েছেন৷ তাতে চেপে পর্যটকরা আয়েনারিয়া গিয়ে ইস্কিয়ায় পানির নীচে রোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পারেন৷ জুলিয়ো-র ছেলে গেতানো-র মতো তরুণরা ইস্কিয়ায় সাংস্কৃতিক পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টি করতে চান৷ তাঁর মতে, তরুণ প্রজন্মের মনে তাদের বাবা-মায়েদের তুলনায় সমুদ্রকে ভিন্ন ভাবে কাজে লাগানোর আইডিয়া এসেছিল৷
জুলিয়ো লাউরো নিজে মনে করেন, ‘‘ভিটেমাটির প্রতি ভালবাসা থেকেই এই সব শুরু হয়েছে৷ আমরা আমাদের জন্মভূমিকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে চাই৷ আমরা মৌসুমের বাইরেও কর্মসংস্থান বাড়াতে চাই৷ একাধিক আইডিয়া ও উদ্যোগের সমন্বয় এই প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য৷''
এভাবে জেলেরাও প্রত্নতত্ত্ববিদ হয়ে উঠেছেন৷ তাঁরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নিজেদের উদ্যোগে ডুবুরির পোশাক ও সরঞ্জাম কিনেছেন এবং প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমতি জোগাড় করেছেন৷ সেইসঙ্গে তাঁরা পানির নীচের এক প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞকে এনেছেন, যিনি আজও খননের কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷
পানির নীচে প্রত্নতত্ত্বের কাজ বেশ কঠিন৷ ধীরে ধীরে সূক্ষ্ম কাজের ফলে যে অংশ উদ্ধার করা হয়েছে, পানির স্রোত ও ঢেউ মুহূর্তের মধ্যে তা আবার ঢেকে দিতে পারে৷ কিন্তু জেলেরা হাল ছাড়েননি৷ এমনকি তাঁরা রোমান আমলের এক বন্দর আবিষ্কার করে চমক সৃষ্টি করেছেন৷ একটি ভিলার ধ্বংসাবশেষও তাঁরা আবিষ্কার করেছেন৷ রোমানরা যে সত্যি ইস্কিয়ায় বসতি স্থাপন করেছিল, এতকাল কেউ তা বিশ্বাস করে নি৷ কারণ রোমান আমলে এই দ্বীপে নিয়মিত ভূমিকম্প হতো৷
হাতে সময় পেলেই জেলেরা অনুসন্ধানের কাজে বেড়িয়ে পড়েন৷ তরুণ জেলেদের মধ্যে অনেকেই বেশ অভিজ্ঞ প্রত্নতাত্ত্বিক ডুবুরি হয়ে উঠেছেন৷ তবে নিয়মিত এই কাজ সত্ত্বেও তাঁদের কাছে এই উদ্যোগের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে৷ জোভি বুয়োনো ডুবুরিদের একজন৷ তিনি নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘‘আমি পানিতে কাজ করি৷ প্রত্যেকবার ডুব মারার সময় অনবদ্য অভিজ্ঞতা হয়৷ কারণ প্রত্যেক বার নতুন কিছু আবিষ্কারের সম্ভাবনা থাকে৷ এই সব আবিষ্কার অতীতকে বুঝতে সাহায্য করে৷ প্রতিদিনই নতুন কিছুর দেখা মেলে৷''
ইস্কিয়ার মানুষ বর্তমানে কার্যত শুধু পর্যটনের উপর নির্ভরশীল৷ প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এই দ্বীপে আসেন৷ তাঁরা উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করেন, বিখ্যাত আরাগোনেসে দুর্গ ঘুরে দেখেন৷ কখনো বিশাল আকারের বিলাসবহুল নৌকাও নোঙর ফেলে৷
দ্বীপের মেয়র এনসো ফেরান্দিনো পর্যটনের নতুন এই শাখাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বটে, কিন্তু জেলেদের জন্য কোনো আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিতে তিনি দ্বিধা করেন৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘সব জেলায় অর্থাভাব রয়েছে৷ যা পাওয়া যায়, তা দিয়ে কোনোমতে সবকিছু চালাতে হয়৷ তবে এটা ভালো উদ্যোগ, এ নিয়ে আমাদের ভাবনাচিন্তা করা উচিত৷''
প্রত্নতত্ত্ববিদ হিসেবে আলেসান্দ্রা বেনিনি জেলেদের উদ্যোগ সম্পর্কে অভিভূত৷ তিনি বলেন, ‘‘জেলেরা এই গবেষণার প্রতি আস্থা রেখেছিলেন৷ এখানকার পরিস্থিতি সত্যি অসাধারণ৷ কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সব রকম অনুমতি থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি উদ্যোগেই এখানকার সব ব্যয় বহন করা হচ্ছে৷''
রাষ্ট্রীয় সহায়তা ছাড়াই জেলেরা কাজ চালিয়ে যেতে চান৷ জুলিও-র মতে, এর একটা সুবিধাও রয়েছে৷ কেউ কাজে নাক গলাতে আসে না৷
ভাইট-উলরিশ ব্রাউন/এসবি