সতর্ক করে দিলো ইইউ, কিন্তু ব্রিটেন অবিচল
১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ব্রেক্সিট চুক্তি লঙ্ঘনের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের মধ্যে সংঘাতের মাত্রা এবার বাড়তে চলেছে৷ ইইউ বৃহস্পতিবার ব্রিটেনকে সরাসরি বিতর্কিত আইনের খসড়া বাতিল করার ডাক দিয়েছে৷ উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তি প্রক্রিয়া বিপন্ন করতে পারে, এমন কোনো পদক্ষেপ এই রাষ্ট্রজোটের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷
রাষ্ট্রজোটের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারোস সেফকোভিচ লন্ডনে ব্রেক্সিটের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মাইকেল গোভের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন৷ তিনি বলেন, ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্তের ফলে পারস্পরিক আস্থার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে৷ গোভ অবশ্য তাঁকে বলেন, এই সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না৷ অর্থাৎ বরিস জনসনের সরকার সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে ব্রেক্সিট চুক্তি ভেঙে অভ্যন্তরীণ আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে৷
এমন প্রেক্ষাপটে ইইউ চলতি বছরের শেষে কোনো বোঝাপড়া ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর করার প্রস্তুতি শুরু করছে৷ সেইসঙ্গে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে৷ তবে চলতি বছরের মধ্যে সেই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ফলাফলের আশা ক্ষীণ৷
প্রায় চার বছর ধরে দফায় দফায় আলোচনা ও অনেক নাটকীয় ঘটনার পর ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে বিচ্ছেদ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল৷ বরিস জনসনের সরকারই সব শর্ত মেনে সেই চুক্তিতে সম্মতি জানিয়েছিল৷ অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের শেষে দুই পক্ষের মধ্যে যতটা সম্ভব বাধাহীন বাণিজ্য চালিয়ে যেতে আলোচনা চলছে৷ ব্রিটেনের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের ফলে এতদিনের পরিশ্রম সম্পূর্ণ বিফল হয়ে যাবে, বিভিন্ন মহলে এমন ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে৷ পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাবে আগামী বছর ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরম অরাজকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ শুল্ক, সীমান্তে নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মানুষ ও পণ্যের যাতায়াতে নানা বাধা সৃষ্টি হবে৷
এমন অস্থিরতার মাঝে ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে এই মুহূর্তে লন্ডনে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে পরিকল্পিত আলোচনা চালাচ্ছেন৷ তিনি ব্রিটেনের মনোভাবের কড়া সমালোচনা করেন৷ তাঁর মতে, পারস্পরিক স্বার্থে আলোচনার বদলে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক নীতি ও আদর্শের তোয়াক্কা করছে না৷ ব্রিটেনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী ডেভিড ফ্রস্ট অবশ্য আগামী সপ্তাহে ব্রাসেলসে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে পরবর্তী দফার আলোচনা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর৷
বরিস জনসনের সরকারের এমন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলছে৷ কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিঘ্ন ঘটিয়ে ব্রাসেলসের অবস্থান বদলানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে চান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ অনেকের মতে, করোনা মহামারির ফলে চলমান সংকট থেকে দৃষ্টি সরাতেই তিনি এমন বেপরোয়া আচরণ করছেন৷ সে ক্ষেত্রে তিনি অর্থনৈতিক সংকটের দায় চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের উপর চাপাতে পারবেন৷ তবে এমন পদক্ষেপের ফলে ঝুঁকির মাত্রা এখনই পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয় বলে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে দিচ্ছেন৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)