বিতর্ক সত্ত্বেও আইন ভাঙতে বদ্ধপরিকর জনসন
১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখেও অবিচল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ আইন প্রণয়ন করে তিনি ব্রেক্সিট চুক্তির কিছু শর্ত ভাঙার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন তিনি৷ ব্রিটেনের সংসদে জনসন বলেন, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ বাজারের অখণ্ডতা নিশ্চিত করতে তাঁর সরকার এই আইন কার্যকর করার পথে এগিয়ে যাবে৷ চাকুরি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি রক্ষা করতে এবং গোটা দেশে সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতেই তিনি এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন, বলেন জনসন৷ উল্লেখ্য, নিম্ন কক্ষে যথেষ্ট আসনসংখ্যার জোরে তিনি আইনের খসড়া অনুমোদন করাতে পারলেও উচ্চ কক্ষে প্রবল বাধার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷
জনসনের সরকার সত্যি প্রস্তাবিত আইন কার্যকর করলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাতিল হয়ে যাবে৷ সেই বোঝাপড়া অনুযায়ী ব্রেক্সিট পুরোপুরি কার্যকর হবার পর ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশে শুল্কের ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম চালু করার কথা৷ আইরিশ প্রজাতন্ত্র ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের স্থল সীমানায় নিয়ন্ত্রণ এড়াতেই চুক্তিতে সেই পদক্ষেপ অন্তর্গত করা হয়েছিল৷ ব্রিটেন সেই শর্ত ভাঙলে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ভঙ্গুর শান্তি প্রক্রিয়া হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
এমন প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারোস সেফকোভিচ বৃহস্পতিবার লন্ডন সফর করবেন৷ তিনি মঙ্গলবার ব্রিটেনের ব্রেক্সিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মাইকেল গোভের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে ব্রিটেনের কাছে ব্রেক্সিট চুক্তি পুরোপুরি কার্যকর করার আশ্বাস চেয়েছেন৷ গোভের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় তিনি ব্রিটিশ সরকারের প্রকৃত অবস্থান জানতে চান৷
ইইউ সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেল এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, আন্তর্জাতিক আইনভঙ্গের ঘটনা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আস্থা সৃষ্টি করে না৷
এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও উত্তাল হয়ে উঠছে৷ আন্তর্জাতিক স্তরে ব্রিটেনের ভাবমূর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তার পাশাপাশি ক্ষমতার বণ্টন নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে৷ স্কটিশ জাতীয় দলের সংসদ সদস্য আয়ান ব্ল্যাকফোর্ড বলেন, প্রস্তাবিত এই আইনের ফলে স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টের উপর কার্যত আক্রমণ চালানো হচ্ছে৷ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীভূত করছে৷ তিনি জনসনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করেন৷
এই অবস্থায় ব্রেক্সিট-পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে৷ এক পক্ষ আইন ভাঙার উপক্রম করায় বোঝাপড়ার কাঠামোর ভীত দুর্বল হয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ ইইউ কমিশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লোদ ইয়ুংকার চুক্তিহীন ব্রেক্সিট ঘটবে বলে মনে করছেন৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)