ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ফাটল?
২৩ জুন ২০১৬সুষমা স্বরাজ জানান, মোদী সরকারের এই ইতিবাচক বার্তায় দু'দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকবে না৷
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর একের পর এক চোরাগোপ্তা জঙ্গি হামলা রোধে শেখ হাসিনা সরকারের পাশে থাকবে ভারত৷ শুধু তাই নয়, এ রকম হামলা দমনে ভারত সব রকম সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত৷ ভারত মনে করে, শেখ হাসিনা সরকারের নেওয়া ব্যবস্থার সবথেকে ইতিবাচক দিক হলো, এই কাজে দেশের বৃহত্তর জনমত এবং ইসলাম ধর্মীয় গুরুদের সমর্থন আদায় করতে পেরেছে৷ তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদকে মাথা তুলতে দিলে দেশের সমূহ বিপদ৷ একে অঙ্কুরেই বিনাশ করা জরুরি৷ ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের মতো এক আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থাকে হুমকি দিয়ে চিঠি দেবার ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন তিনি৷ ভারত ও বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় স্তরে বিষয়টি নিয়ে আরও কথাবার্তা চলছে৷ জঙ্গি কার্যকলাপ দমনে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই যে সর্বাত্মক চালিয়েছেন তা প্রশংসনীয়, বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ৷
তবে দিল্লির বিদেশ মন্ত্রণালয়ের অন্দর মহলে অনেকের মনে প্রশ্ন, হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর পর পর জঙ্গি হামলা কি পরিকল্পিত একটা ছক? এর পেছনে কি আছে কোনো রাজনৈতিক চক্রান্ত? যদি থাকে তাহলে সেটা কী? এ বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ি মনে করেন, ‘‘পারস্পরিক স্বার্থে ভারত-বাংলাদেশের সুসম্পর্ক থাকা একান্ত জরুরি৷ বিদেশ নীতি এবং অর্থনীতি উভয় দিক থেকেই৷ সেখানে ফাটল ধরাতে দেবে না উভয় দেশই৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ইসলামিক স্টেট-এর ধর্মীয় মৌলবাদ বেছে বেছে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের হত্যা করছে৷ রামকৃষ্ণ মিশনকে ইসলামিক স্টেট-এর হুমকি দেওয়া চিঠি সব ভারতীয়দের ভাবাবেগকে আঘাত করেছে৷ বাংলাদেশের বিরোধী শক্তিগুলি তাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে, অতীতেও সেটা করেছে৷ যত শীঘ্র সম্ভব এর সমাধান করা দরকার৷ এক্ষেত্রে ভারতের সাহায্য নেওয়া উচিত হবে শেখ হাসিনার, এমনটা মনে করেন অধ্যাপক লাহিড়ি৷
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা চালালে ভারতে হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবারকে ক্ষেপিয়ে তোলা সহজ হবে৷ দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনার বাতাবরণ তৈরি হবে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষিয়ে উঠবে৷ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক তথা সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে৷ ক্ষমতা দখলে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইবে বিরোধী বিএনপি ও জামাত৷ দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামি মৌলবাদী জঙ্গিবাদের উত্থানে দেশের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হবে৷ আর এইসব দিক মাথায় রেখেই মোদী সরকার কোনো বিরূপ মন্তব্য করেনি৷ রাজনৈতিক চক্রান্তের ফাঁদে পা বাড়াননি৷ শুধু তাই নয়, হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবারকে পর্যন্ত কোনো আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেননি মোদী সরকার এবং বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷
নাগরিক সমাজের গৈরিকপন্থিদের কেউ কেউ অবশ্য টিপ্পনী কেটে বলছেন, ভারতের যেসব বুদ্ধীজীবীরা গো-মাংস বা বিজেপির কথিত ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে সরব হয়েছেন, পুরস্কার ফেরত দিয়েছেন, বাংলাদেশে হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে এখনও পর্যন্ত তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন কেন? এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক লাহিড়ি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতে বুদ্ধিজীবীরা অনেক নিরাপদ, কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের হত্যায় তাঁরা ভীত৷ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না৷ তবে ভারতের বুদ্ধিজীবী মহলের উচিত সরব হওয়া৷''
পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি কটাক্ষ করে বলেছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সম্পর্ক তো ঘনিষ্ট, তবু তিনি নীরব দর্শক হয়ে আছেন কেন? এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক লাহিড়ির বলেন, ‘‘এর হয়ত একটা রাজনৈতিক দিক থাকতে পারে৷ তবে মমতা বন্দোপাধ্যায় নির্বাচনের আগে এবং পরে বাংলাদেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ওপর জোর দিয়ে এসেছেন৷ তাই তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নেও সক্রিয় হয়ে উঠছেন৷''
উল্লেখ্য, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আবার এই নিয়ে আলোচনা শুরু হতে চলেছে৷ কারণ ভারত, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ঐকমত্যে আসতে হবে৷ নতুন দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনার মোয়াজ্জেম আলি ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনকে দেওয়া জঙ্গিদের হুমকি এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে দু'দেশের সরকারের মধ্যে কত দূর কী আলোচনা হয়েছে, সেবিষয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে অবহিত করেন৷
সংখ্যালঘু হত্যাকে কেন্দ্র করে কি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে আবারো ভাঙন দেখা দিতে পারে? আপনার মতামত জানান নীচের ঘরে৷