মন্দিরে সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ, বাড়ছে আতঙ্ক
১৬ জুন ২০১৬নিরপত্তার কারণে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দু'মাস ধরে বন্ধ আছে সব রকম সামাজিক অনুষ্ঠান৷ পুরোহিত, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা এবং সাধারণ অনুসারীদের কথায়, তাঁরা এখনো ধর্ম পালনে কোনো বাধার মুখে না পড়লেও দিন দিন আতঙ্ক বাড়ছে৷
বুধবার তথকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর নামে পাঠানো চিঠিতে রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষকে বলা হয়, ‘‘বাংলাদেশ একটি ইসলামি রাষ্ট্র৷ এখানে ধর্মপ্রচার করতে পারবি না৷ ধর্মপ্রচার করা হলে ২০ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে তোকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হবে৷''
এ বিষয়ে স্বামী ধ্রুভেশানন্দ মহারাজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হুমকির পর আমাদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ যাঁরা মিশনে আসেন তাঁদের তল্লাশি করা হয়৷ আমরা আতঙ্কে থাকলেও আমাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ঠিকমত করছি৷ তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না৷''
তিনি জানান, ‘‘এর আগেও বালিয়াটি রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল৷ সারাদেশে রামকৃষ্ণ মিশনের ১৪টি শাখা আছে৷ এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে আছে আরো ১০০টি আশ্রম৷ আমরা সবাইকে সাবধানে, সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা এবং দৈনন্দিন কাজ করতে বলেছি৷ যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে পুলিশের সহযোগিতা নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছি৷''
মিশন অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘সারাবিশ্বেই এখন উগ্রবাদী-সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ছে৷ বাংলাদেশও তার বাইরে নয়৷''
এদিকে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মণ্ডলির সদস্য কাজল দেবনাথ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সারাদেশে ২৪ হাজারের মতো মন্দির আছে৷ ঢাকাসহ বড় বড় কিছু মন্দিরে পুলিশের নিরপত্তা আছে৷ তবে সব মন্দিরে পুলিশ দিয়ে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয় সম্ভব নয়৷ এরজন্য প্রয়োজন সামাজিক উদ্যোগ এবং সচেতনতা৷''
তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্য যে পুরোহিত ও সেবক হত্যা, মন্দিরে হামলাসহ নানা ঘটনায় হিন্দুসহ সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে আছেন৷ কিন্তু পূজা অর্চনায় কোনো বাধা নেই এবং সমস্যাও হচ্ছে না৷''
ভিন্ন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নিয়মিত পূজা-অর্চনা হলেও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ আছে গত দু'মাস ধরে৷ পুরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশ চিঠি দিয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছে৷ আমরাও তাই বন্ধ রেখেছি৷''
সামাজিক অনুষ্ঠানের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘‘পূজা-অর্চনা ছাড়াও ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিয়ে, শ্রাদ্ধসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান হয়৷ এখানে কমিউনিটি সেন্টার আছে৷ আপাতত এ সব অনুষ্ঠান বন্ধ আছে৷''
ওদিকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আতঙ্ক আছে৷ পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তিনটি মন্দিরের সেবক তপন ভৌমিক ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা এখনো কোনো হুমকি পাইনি৷ আমাদের পূজা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না৷ তবে চারদিকে যা শুনি তাতে ভয় পাই৷''
তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই নেতা ও পুরোহিত এবং সেবকরা বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখনো ধর্মীয় সম্প্রীতি অটুট আছে৷ সব ধর্মের অনুসারীরা মিলে মিশেই আছেন৷ রাষ্ট্র এবং সরকার সহযোগিতা দিচ্ছে৷''