শুকনো ফুল দিয়ে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেন রেবেকা
২৭ আগস্ট ২০২০ইটালির উত্তরে পার্মা শহরে এক প্রাক্তন মনাস্ট্রি বা মঠের মধ্যে বিশাল ইনস্টলেশন হিসেবে হাজার হাজার শুকনা ফুল দিয়ে তৈরি এক শিল্পকর্ম শোভা পাচ্ছে৷ শিল্পী নিজে ব্রিটেনের ওয়েলস প্রদেশে এক এস্টেটে বসবাস করেন৷ রেবেকা লুইজ ল প্রায় ১৩ বছর ধরে শুকনা ফুল নিয়ে কাজ করছেন৷ নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমি ফুলকে প্যালেট হিসেবে ব্যবহার করি৷ সেগুলি শুকিয়ে সংরক্ষণ করি, কিছুই ফেলে দিই না৷ ফ্লোরিস্টদের আবর্জনাই আমার কাজের উপাদান৷’’
পার্মা শহরকে ২০২০ সালে ইটালির সাংস্কৃতিক রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে৷ সেই উপলক্ষ্যে যে সব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে, তার মধ্যে ‘ফুলের সংগ্রহ’ নামে রেবেকার এক ইনস্টলেশনও স্থান পেয়েছে৷
ফেব্রুয়ারি মাসেই সেই ইনস্টলেশন গড়ে তোলা হয়েছে৷ মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে শিল্পী প্রায় দুই লাখ শুকনা ফুল দিয়ে এক ভাস্কর্য গড়ে তুলেছেন৷ তারপর করোনা সংকটের কারণে প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান বেশ কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে হয়েছিল৷
ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি মনাস্ট্রির চ্যাপেলটি এক সময়ে গরিব রোগীদের ভেষজ ওষুধের সূত্র ছিল৷ ফুল দিয়ে তৈরি শিল্পকর্মটি প্রদর্শনীর জায়গার প্রতি এক শ্রদ্ধার্ঘ৷ প্রদর্শনীর কিউরেটর জর্জিয়া ওরি বলেন, ‘‘এই সরু তামার তারের উপর প্রত্যেকটি ফুল আলাদা করে লাগানো হয়েছে৷ শিল্পী নিজের বাসার স্টুডিওতে এই কম্পোজিশন প্রস্তুত করে ইটালিতে পাঠিয়েছেন৷ এখানে আমরা তাঁর সঙ্গে মিলে ফুলের গুচ্ছগুলি ইস্পাতের কাঠামোয় ঝুলিয়ে দিয়েছি৷’’
আন্তর্জাতিক মঞ্চে রেবেকা লুইজ ল-র পুষ্পশিল্পের কদর কম নয়৷ তাঁর সংগ্রহে ১০ লাখেরও বেশি শুকনা ফুল রয়েছে৷ তার মধ্যে কিছু ফুল তিনি বার বার ব্যবহার করেন৷ যেমন ২০১৬ সালে বার্লিনে, অথবা দুই বছর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টোলেডো শহরে৷ তিনি জায়গা অনুযায়ী ভাস্কর্য গড়ে তোলেন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত জায়গায় সেগুলি শোভা পায়৷
যেমন ২০১৯ সালে অ্যামেরিকার মিশিগান রাজ্যে ‘দ্য উম্ব’ বা মার্তৃগর্ভ নামের ইনস্টলেশন আয়োজন করা হয়েছিল৷ রেবেকা লুইজ ল বলেন, ‘‘যেখানে মানুষ হয়তো প্রকৃতি ও পৃথিবীর সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে, সেখানে তাদের একটু সচেতন করে তুলতে আমি প্রকৃতিকে নিয়ে আসতে ভালবাসি৷’’
করোনা সংকটের কারণে কড়া নিয়মের বেড়াজালে পার্মায় প্রদর্শনীতে একই সময়ে দুই জনের বেশি প্রবেশ করতে পারেন নি৷ প্রতিদিন প্রায় ৩০০ দর্শক আসার ফলে চাপ দেখে গেছে৷
রেবেকা আসলে চলতি বছরের শেষেই ফুলের সজ্জা সরিয়ে ফেলে আবার সেগুলি ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিলেন৷ কিন্তু এখন তাঁর মাথায় নতুন এক আইডিয়া এসেছে৷ রেবেকা বলেন, ‘‘আমার মনে হলো এই শিল্পকর্ম আর আমার নেই৷ তাছাড়া প্রায় দুই লাখ ফুল সরিয়ে ফেলতে হবে৷ এই ইনস্টলেশন পার্মার নিজস্ব সম্পদ হিসেবে রেখে দেবার বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি৷’’
কারণ পার্মার মানুষ এই শিল্পকর্মের অংশ হয়ে উঠছেন৷ ২০২০ সালের বসন্তে রেবেকা স্থানীয় ফুলের শুকনা রূপ দিয়ে ইনস্টলেশনের আরও সম্প্রসারণ ঘটাতে চান৷ স্থানীয় মানুষই সেই ফুল সংগ্রহ করেছেন৷
মিশায়েল কাডেরাইট/এসবি
গতবছরের ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...