শীতে নানা রোগের হানা
২২ ডিসেম্বর ২০২৩এদিকে আইসিডিডিআর,বি জাানিয়েছে, নভেম্বর থেকেই ডায়রিয়ার বোগী বাড়তে শুরু করে। এখন গড়ে তাদের হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০০ বোগী আসছেন। তবে শীতে এটাকে তারা স্বাভাবিক মাত্রাই মনে করছেন। দিনে কখনো কখনো ৮০০ রোগীও হয়। সাধারণত শীত ও গরম কালকে ডায়রিয়ার ‘পিক' সময় ধরা হয়। এবারও সেই মাত্রায়ই রোগী আসছে। তকে এটা দিনে হাজার ছাড়িয়ে গেলে প্রাদুর্ভাব বলা যাবে বলে জানান তারা।
দেশের উত্তরাঞ্চলে শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। তাই ওইসব জেলার হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগী বাড়ছে। এর সঙ্গে শিশুদের ডায়রিয়াও বাড়ছে। গাইবান্ধায় ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগের সাত দিনে ডায়রিয়ায় দুই শিশুসহ সাত জন মারা গেছেন। একই সঙ্গে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুও বাড়ছে। গাইবান্ধায় এক সপ্তাহে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দেড়শ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪০জন।
কুঁড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মোট ধারণক্ষমতা ২৫০। বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালে রোগী ছিলেন ৩৭৩ জন। শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ৭৪ জন। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ৪০ জন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহিনুর রহমান বলেন, "শীতে রোগী বাড়ে। সেটা শীতজনিত রোগ ও ডায়রিয়ার রোগী। এটা স্বাভাকিক ট্রেন্ড। এখন পর্যন্ত অস্বাভাবিক পর্যায়ে যায়নি।”
উত্তরেরর সব জেলায়ই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এই শীতে এখন পর্যন্ত ২০-২৫ ভাগ বেড়েছে। আর রোগের মধ্যে ডায়রিয়া ছাড়াও , শীতজনিত সর্দি, কাশি ছাড়াও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। চর্ম রোাগেও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পঞ্চগড় জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা কামাল চৌধুরী জানান, "জেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত শতকরা ১৫ ভাগের মতো বেড়েছে। যারা আসেন, তারা শীতজনিত সর্দি, কাশি, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।"
তিনি বলেন, "এখন শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, সারা দেশেই রোগী বাড়ছে। তবে এটা কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা নয়। শীতে স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের রোগী বাড়ে। সারা দেশের হাসপাতালেই রোগী এখন বাড়ছে। কোথাও ১০ ভাগ, কোথাও ১৫ ভাগ।”
তার কথা, এই সময়ে হাসপাতালের প্রস্তুতির সঙ্গে মানুষের সচেতনতাও দরকার। ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। তাই বিশুদ্ধ পাানি পান যেমন জরুরি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাও জরুরি।
ঢাকার শিশু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে রোগী বাড়ছে। শিশুদের বড় একটি অংশ ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে। শিশুদের নিউমোনিয়াও হচ্ছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার বলেন, "এখন যে শিশুরা হাসপাতালে আসছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। আর চর্ম রোগেও আক্রান্ত হয়। "
তিনি বলেন, ‘‘এই সময়ে শিশুরা ব্রঙ্কিউলাটিস-এ আক্রান্ত হয়। এটা নিউমোনিয়ার মতো অত জটিল নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অনেকেই না বুঝে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করান। এতে শিশুর আরো ক্ষতি হচ্ছে। ”
তার কথা, "শীতে বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট, শ্বাস নালির প্রদাহ, ফুসফুসের রোাগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনকে। ”
তিনি বলেন, "দেশের বাইরে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শীতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আমাদের এখানে স্ক্রিনিং হচ্ছে না। এটা চালু রাখা উচিত। আর ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগ। শুধু বর্ষাকাল নয়, এই শীতেও মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে।”
কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, "এবার শিশুদের নিউমোনিয়া বেশি দেখা যাচ্ছে এই শীতে। শিশুরা মারাও গেছে নিউমোনিয়ায়। আর ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া বেড়ে গেছে।"
তার কথা, "এবার শীতে রোগ পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। কারণ, সারাবিশ্বের ২৯টি দেশ কলেরার ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও একটি। বাংলাদেশে ১৪১ জন কলেরা রোগী শনাক্ত হয়েছে। যদি এটা ঠিক মতো ম্যানেজ করা না যায় এবং পানীয় জল ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি করা না যায় তাহলে এর প্রাদুর্ভাব ঘটতে পরে। বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে নিপাহ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে এবং ক্রমাগত এটি বিস্তৃত হচ্ছে। শীতেই এটা বিস্তৃত হয়। আর ডেঙ্গু তো আছেই। এখন করোনার নতুন ধরন জিএন-১ ভাইরাস ভারতে পাওয়া গেছে। এটা বাংলাদেশেও চলে আসতে পারে। ”
তিনি বলেন, "শীতের প্রচলিত রোগের পাপশাপাশি ডেঙ্গু, করোনা আর নিপাহ ভাইরাস এবার আমাদের জন্য নতুন উদ্বেগ। নিউমোনিয়াও বেড়ে যাচ্ছে।"
তবে তিনি মনে করেন, "বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর এ ধরনের রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দক্ষতা গড়ে উঠেছে। তাই সব পক্ষ সতর্ক থাকলে আতঙ্কের কিছু নাই।”
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধাপক ড. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, "শীতে শীতজনিত রোগ বাড়ে। এটার জন্য সতর্কতার বিকল্প নাই। এই সময়ে শিশু এবং বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই তাদের যতদূর সম্ভব ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। সামর্থ্য থাকলে রুম হিটার ব্যবহার করতে হবে। আর কোনো রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
আর করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তিনি এখনই সতর্ক হওয়রার পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশের হাসপতালগুলোকে শীতের রোগের পাশাপাশি করোনার ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতামূলক প্রচারও বাড়ানো হয়েছে। আর এই সময়ে দেশের যেসব অঞ্চলে শীত বেশি পড়ছে, সেসব অঞ্চলে নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে গরম কাপড় বিতরণ জরুরি।
এদিকে শীতেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট অব্যাহত আছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর, মিরপুর, সোবহান বাগ যাত্রাবাড়ি, রামপুরা, বাড্ডা, উত্তর খান ও দক্ষিণ খানসহ আরো কিছু এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র হচ্ছে। পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, সহসা এই গ্যাস সংকট কাটবে না। কারণ, প্রতিদিন এখন দেশে গ্যাসের চাহিদা চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘন ফুট সর্বোচ্চ তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে।